সুরা আল বাকারা, নামকরণ ও বিষয়বস্তু আজকের আলোচনার বিষয়। “সুরা আল বাকারার নামকরণ ও বিষয়বস্তু [Naming and Content of Surah Al-Baqarah]” ক্লাসটি “কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ” বিষয়ের পাঠ, যা ৯ম শ্রেণীতে [Class- 9] পড়ানো হয়। “সুরা আল বাকারার নামকরণ ও বিষয়বস্তু [Naming and Content of Surah Al-Baqarah]” পাঠটি “কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ” বিষয়টিতে বা “১ম অধ্যায় [Chapter- 1]” এর ১ম ভাগে পড়ানো হয়।
সুরা আল বাকারা, নামকরণ ও বিষয়বস্তু
সূরা বাকারা, কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সূরা, আয়াত সংখ্যা ২৮৬, মাসহাফে এটি সূরা ফাতিহার পর দ্বিতীয় ক্রমে এর অবস্থান। রেওয়ায়েত রয়েছে যে ইহা মদিনায় নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম সূরা, তবে এই আয়াতটি ছাড়া
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
, কেননা, এটি আসমান থেকে নাযিলকৃত শেষ আয়াত যা বিদায় হজ্জের সময় মিনায় কোরবানীর দিন নাযিল হয়েছে। সুদ সংক্রান্ত আয়াতও কুরআনের প্রথম দিকে নাযিল হয়। খালিদ বিন মা’দান বলেন, এ সূরার মর্যাদা, মহিমা, হুকুম-আহকাম ও উপদেশের আধিক্য ইত্যাদি কারণে একে ফুসতাতুল কুরআন (কুরআনের বসতি) বলা হয়।
উমর ইবনুল খাত্তাব এ সূরাটির আইনশাস্ত্র এবং এতে যা আছে তা শিখতে বারো বছর সময় নেন, যেখানে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে উমর আট বছরেই শিখে ফেলেছিলেন। কারণ এ সূরাটি একেবারে নাযিল না হয়ে ধাপে ধাপে নাযিল হয়।

এ সূরার ২৫৫ (দুইশত পঞ্চান্ন) নং আয়াতে আয়াতুল কুরসি রয়েছে, যা কুরআনের সবচেয়ে মহিমান্বিত আয়াত। আবু হুরাইরাহ রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ «وكلني رسول الله ﷺ بحفظ زكاة رمضان فأَتاني آت فجعل يحثو من الطعامِ فأَخذته فقلت لأَرفعنك إِلى رسول الله فقص الحديث فقال إِذا أَويت إِلى فراشك فاقرأ آية الكرسيِ لن يزال معك من الله حافظ ولا يقربك شيطان حتى تصبِح وقال النبِي: صدقك وهو كذوب ذاك شيطان»
তাছাড়া কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত এ সূরার অন্তর্ভুক্ত, আর তা হল আয়াতুল মুদায়ানাহ।
নামকরণ
বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের প্রত্যেকটি সূরার এত ব্যাপক বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে যার ফলে বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে তাদের জন্য কোন পরিপূর্ণ ও সার্বিক অর্থবোধক শিরোনাম উদ্ভাবন করা সম্ভব নয়। শব্দ সম্ভারের দিক দিয়ে আরবি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ হলেও মূলত এটি তো মানুষেরই ভাষা আর মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলো খুব বেশি সংকীর্ণ ও সীমিত পরিসর সম্পন্ন।
সেখানে এই ধরনের ব্যাপক বিষয়বস্তুর জন্য পরিপূর্ণ অর্থব্যাঞ্জক শিরোনাম তৈরি করার মতো শব্দ বা বাক্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআনের অধিকাংশ সূরার জন্য শিরোনামের পরিবর্তে নিছক আলামত ভিত্তিক নাম রেখেছেন। এই সূরার নামকরণ আল বাকারাহ করার অর্থ কেবল এতটুকু যে, এটি এমন সুরা যেখানে গাভীর কথা বলা হয়েছে।
- সূরা আল-বাকারাহকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছিল কারণ এতে আল-বাকারা এবং ইসরায়েলের সন্তানদের গল্প রয়েছে যা ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহর নবী মুসা আ এর যুগে ঘটেছিল।
- সূরাটিতে এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধাজ্ঞা, এক হাজার উপদেশ এবং এক হাজার সংবাদ অন্তর্ভুক্ত।
- লিখিত, মুদ্রিত এবং সংরক্ষিত কুরআনের বাকারা সূরার আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি, যা হাফস বিন সুলেমান বিন আল- মুগিরাহ আল-আসাদি আল-কুফি এর বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবং আর কোনো ভিন্ন মত পাওয়া যায় না।
- একইভাবে বাকারা সূরার আয়াতসংখ্যা যে ২৮৬ টি তা ওয়ারশ নামে প্রসিদ্ধ উসমান বিন সাঈদ আল-মিসরির বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- তবে এই কিরাতগুলিতে পার্থক্য হলো, “হাফসের” কিরাআতে সূরার শুরুতে হুরুফে মুকাত্তায়াত যেমন বাকারার শুরুতে “আলিফ লাম মিম” এবং সূরা আরাফের শুরুতে “আলিফ লাম মিম সাদ” ও ইত্যাদিকে ১ আয়াত হিসেবে গণনা করা হয়েছে। কিন্তু “ওয়ারশ” কিরাআতে সেই হুরুফগুলিকে একটি স্বাধীন আয়াত হিসাবে গণনা না করে পরবর্তী আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুরা আল বাকারা, নামকরণ ও বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ
