খন্দকের যুদ্ধের কারণ | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

খন্দকের যুদ্ধের কারণ | খন্দকের যুদ্ধ-১, এক কথায় বলতে গেলে, খন্দকের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইহুদি উপজাতি বনু নাদিরের উসকানির ফলেই। স্মরণ করে দেখুন, তারা নবিজিকে (সা) পাথর ছুড়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল (৫৩তম পর্বে আলোচনা করেছি); সেই কারণে তাদের মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তারা মদিনা থেকে দেড়শ কিলোমিটার উত্তরে খায়বার নামক স্থানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তারা হারানো জমি ফিরে পাওয়ার আশায় সাল্লাম ইবনে আবি আল-হুকায়েক ও হুয়ায় ইবনে আখতাবসহ উপজাতির অন্য নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এক প্রতিনিধিদলকে মক্কার কুরাইশদের কাছে পাঠায়। প্রতিনিধিদল কুরাইশদের বলে, “এসো, আমরা বনু নাদির ও কুরাইশ একে অপরকে সাহায্য করি যাতে আমরা একই সঙ্গে মুসলিমদের আক্রমণ করতে পারি।” তারা আরও বলে, “তোমাদের যত টাকা প্রয়োজন, তা আমরা দেব।”

খন্দকের যুদ্ধের কারণ | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খন্দকের যুদ্ধের কারণ | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সিরিয়ার বাণিজ্যপথ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে কুরাইশরা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তারা মুসলিমদের মোকাবেলা করার উপায় খুঁজছিল। ওহুদের যুদ্ধে তারা পুরোপুরি বিজয় অর্জন করতে পারেনি; প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় বদরের অভিযানেও যেতে পারেনি। মুসলিমদের শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতা দেখে তারা এককভাবে যুদ্ধ করারও সাহস পাচ্ছিল না। এই অবস্থায় বনু নাদিরের কাছ থেকে প্রস্তাব এল। তাই এটা ছিল কুরাইশদের জন্য একটি লোভনীয় প্রস্তাব ।

বনু নাদির জানত যে তাদের যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বা দক্ষতা কোনোটাই নেই। যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষাই ছিল তাদের মূল কৌশল। তারা  বিশ্বাস করত, বিশাল বিশাল দুর্গসমেত তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল দুর্ভেদ্য। কিন্তু বহিষ্কারের ঘটনা তাদের আস্থার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই অন্যের সাহায্য নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অন্যদিকে, কুরাইশরা ইহুদিদের সমীহ করে চলত। সেই ইহুদিরা এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে—এটা তাদের জন্য বিস্ময়কর। আলোচনার একপর্যায়ে কুরাইশ আৰু সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল, “তোমরা তো মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাদের কাছে এসেছ। সন্দেহ নেই, যে-ই তার বিরুদ্ধে লড়াই করবে, সে-ই আমাদের মিত্র। তবে তার আগে আমাকে উত্তর দাও, কার ধর্ম তোমাদের ধর্মের কাছাকাছি? আমাদের না তার (মুহাম্মদের)?”

কুরাইশদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। তারা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছিল। বনু নাদির একটি ইহুদি গোত্র, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদি ধর্মের সঙ্গে মুসলিমদের অনেক মিল ছিল, কিন্তু তারা আবার মুসলিমদের প্রতি বৈরী; অর্থাৎ ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত চলছিল; মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বনু নাদিরের লোকেরা কুরাইশদের সহযোগিতা চাইছে। এই জটিল সমীকরণ বুঝতে কুরাইশদের অসুবিধা হচ্ছিল।

 

খন্দকের যুদ্ধের কারণ | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

[প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, পৃথিবীর আর কোনো ধর্মই ইহুদি ধর্মের চেয়ে ইসলামের কাছাকাছি নয়। দুটি ধর্মের তত্ত্ব, ইহুদিদের ধর্মীয় বিধান (‘হালাখা’), মুসলিমদের ধর্মীয় বিধান (শরিয়া) ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে তাদের ৮০ শতাংশ প্রায় একই রকম। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের নবি মুহাম্মদ (সা) তো পূর্ববর্তী ইহুদিদের বিধিবিধান কখনই পড়েননি, তবু এমন মিল কীভাবে হলো? কারণ, এই দুটি ধর্মই একই উৎস (আল্লাহ) থেকে এসেছে। এর আর অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই ।]

আবু সুফিয়ানের প্রশ্নের উত্তরে বনু নাদিরের নেতারা বলল, “মুহাম্মদ ও তার সাহাবিদের চেয়ে তোমরা বেশি হেদায়েতপ্রাপ্ত এবং তোমরাই সত্যের বেশি কাছাকাছি।” বনু নাদিরের এমন জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ কোরানের আয়াতের মাধ্যমে তাদের মুখোশ ও চক্রান্ত উন্মোচন করেন: “তুমি কি তাঁদের দেখনি যাদের কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছিল? তারা ভিত্তিহীন কুহেলিকা এবং অশুভ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। তারা কাফেরদের সম্বন্ধে বলে যে, মুমিনদের চেয়ে এদের পথই ভালো।” [সুরা নিসা, ৪:৫১]

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment