মুযাখা থেকে লক্ষণীয় বিষয় | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

মুযাখা থেকে লক্ষণীয় বিষয় | সুফ্ফার লোকেরা, ১) মুয়াখা মদিনাযুগের প্রারম্ভিক যুগে শুরু হলেও অনেক দিন পর্যন্ত, এমনকি মক্কাবিজয়ের পরেও, অব্যাহত ছিল। জাফর ইবনে আবি তালিব হিজরতের ৭ম বছরে মদিনায় পৌঁছালেও নবিজি (সা) তাঁর সঙ্গে মুআদ ইবনে জাবালের মুয়াখার বন্দোবস্ত করেন। তিনি মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের জন্যও মুয়াম্মার ব্যবস্থা করেন। মক্কাবিজয়ের পরে মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন।

এ থেকে আমরা দেখতে পাই, মুসলিমদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার ধারণা ইসলামের প্রাথমিক সময়ে শুরু হলেও তা মদিনাপর্বের পুরোটা জুড়েই বলবৎ ছিল। নবিজির (সা) এই সুন্নাহটির ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালে আর রক্ষা করা যায়নি। আমাদের সময়ে আবার তা চালু করা উচিত, বিশেষ করে যখন নতুন কেউ ইসলাম গ্রহণ করেন।

 

মুযাখা থেকে লক্ষণীয় বিষয় | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মুযাখা থেকে লক্ষণীয় বিষয় | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

২) যে কোনো সমাজের উন্নতি ও বিকাশের জন্য তার সব মানুষের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন থাকা দরকার। বন্ধনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ধর্মের বন্ধন। একই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অনেক মিল থাকে। যেমন: নীতিবোধ, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালাও পবিত্র কোরানে [৪৯:১০] আমাদের জানিয়েছেন, এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন। মানবজাতির ইতিহাসে অন্য কোনো ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষ নতুনদেরকে এমন নিঃস্বার্থ ও উদারভাবে গ্রহণ করে নেয়নি। সে কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁদের (মুসলিমদের) এই বলে প্রশংসা করেছেন: “যখন তারা এটা করেছিল তখন তাদের অন্তর ঘাঁটি ছিল।” শক্তিশালী আত্মিক বন্ধন না থাকলে কোনো সমাজের পক্ষেই ওরকম স্তরে পৌঁছা সম্ভব নয়।

 ৩) এ ছাড়া লক্ষ করুন, একজন প্রকৃত নেতা (এই ক্ষেত্রে মহানবি মুহাম্মদ (সা)) শুধু তাঁর লোকদের সাধারণভাবে উপদেশ দিয়েই বসে থাকেন না। তিনি তাঁর উপদেশ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তিনি নিজেই দুজন করে বেছে নিয়ে জুটি তৈরি করেন। তিনি মুহাজিরদের প্রত্যেককেই অন্য যে কারও চেয়ে ভালোভাবে চিনতেন। তাই তিনি জানতেন, কোন মুহাজিরের জুটি হিসেবে কোন আনসার সবচেয়ে যোগ্য। প্রকৃত নেতা শুধুই তত্ত্বকথা বলেন না, তা বাস্তবায়নও করেন ।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৪) শরিয়ার সব বিধান একসঙ্গে আসেনি, অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছিল। ধীরে ধীরে বিধান প্রবর্তন করার ব্যাপারটি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রগাঢ় প্রজ্ঞার পরিচায়ক। মদিনায় প্রথমদিকে যখন মুহাজিরদের পরিবার-পরিজন ছিল না, তখন আনসাররা আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের পরিবারে পরিণত হয়েছিলেন। এমনকি শুরুর দিকে সম্পদের উত্তরাধিকারের বিষয়টিও ছিল। এক সময়ে মুহাজিরদের নিজস্ব পরিবার হয়ে গেলে আল্লাহ বিধানটি পরিবর্তন করেন।

( প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, মদ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটিও রাতারাতি আসেনি, চার ধাপে এসেছিল। প্রথম ধাপে মদ পান করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল, শেষ ধাপে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমাদের সময়েও নতুন ইসলাম গ্রহণকারী কেউ বলতে পারেন, ‘আমি কেন এই চার ধাপের পদ্ধতিটি মদ ছাড়ার জন্য ব্যবহার করতে পারি না? আমাকে এই প্রতিটি ধাপের জন্য এক বছর করে সময় দিন। এ বিষয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, প্রথম যুগের সাহাবিরা যেসব বিশেষ সুবিধা পেয়েছিলেন তা পরবর্তী যুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের জন্য অনুমোদিত নয়। কেন? সাহাবিরা ছিলেন মুসলিমদের প্রথম সমাজ। তাঁদের সামনে কোনো অনুসরণযোগ্য উদাহরণ ছিল না। কিন্তু পরবর্তী যুগে যারা ইসলাম গ্রহণ করছেন তাদের সামনে একটি প্রতিষ্ঠিত ইসলামি সামাজিক ব্যবস্থার উদাহরণ আছে। সুতরাং তাঁদের জন্য প্রথম প্রজন্মের মতো শিথিলতা প্রযোজ্য হবে না।

শুধু তাই নয়, আমরা জানি যে ইসলাম গ্রহণের পর নব মুসলিমকে অবিলম্বে নামাজ পড়া শুরু করতে হবে, এমনকি তাকে যদি নামাজের সময় কাগজ ধরে তা দেখে দেখে সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত করতেও হয়। শরিয়া তাঁর ওপর তাৎক্ষণিকভাবেই প্রযোজ্য। মুসলিম হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব তাঁকে ধীরে ধীরে তৈরি করে তোলা।

 

মুযাখা থেকে লক্ষণীয় বিষয় | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

৫) আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের একাধিক আয়াতে আনসারদের প্রশংসা করেছেন। তাদের সুউচ্চ মর্যাদা অনস্বীকার্য। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) বলেছেন, “আনসারদের ভালোবাসা ইমানের চিহ্ন, আর আনসারদের ঘৃণা করা ভণ্ডামির চিহ্ন।” মক্কাবিজয়ের পরে আনসারদের উদ্দেশে নবিজি (সা) যে প্রশংসাসূচক কথা বলেছিলেন তা আমরা অন্য পর্বে আলোচনা করব। তিনি তাঁদের যে পরিমাণ প্রশংসা করেছেন, তা আক্ষরিক অর্থেই নজিরবিহীন। তবু বলা যায়, মুহাজিরদের মর্যাদা তাঁদের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। আল্লাহ যখনই আনসারদের প্রশংসা করেছেন, তখনই মুহাজিরদেরও প্রশংসা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ:

“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথমে এগিয়ে যায়, আর যারা তাদেরকে ভালোভাবে অনুসরণ করেছিল, আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ” [সুরা তওবা, ৯:১০০) আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ করলেন নবির ওপর, আর মুহাজির ও আনসারদের ওপর, যারা সংকটের সময় তাঁর (মুহাম্মদের) সাথে গিয়েছিল।” [সুরা তওবা, ৯:১১৭] পবিত্র কোরানে আরও এক স্থানে আল্লাহ আনসারের সর্বোচ্চ প্রশংসা করা সত্ত্বেও [৫৯:৯] তার ঠিক আগের আয়াতে তিনি মুহাজিরদের প্রশংসা করেছেন [৫৯:৮]।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment