আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন?,

চার প্রধান সাহাবির মধ্যে:

(১) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তখনও মুসলিম হননি; 

(২) উসমান ইবনে আফফান (রা) আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন;

(৩) আলি ইবনে আবি তালিবের বয়স তখন খুব কম ছিল, 

(৪) আবু বকর (রা) প্রথমে উসমানের (রা) সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আলাদাভাবে বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ:

নবিজির (সা) স্ত্রী আয়েশা বিনতে আবু বকর বলেন:

“আমি আমার পিতামাতাকে কখনোই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমাদের এমন কোনো দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় আল্লাহর রসুল (সা) আমাদের বাসায় আসেননি। মুসলিমরা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে আমার পিতা আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হন। বার্ক আল-গিমাদে পৌঁছলে কারা গোত্রের প্রধান ইবনুল দাগিনার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মধ্যে এসব কথাবার্তা হয়: ইবনুল দাগিনা: হে আবু বকর, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আবু বকর (রা): আমার স্বজাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব।

ইবনুল দাগিনা: হে আবু বকর! আপনার মতো ব্যক্তির জন্মভূমি ত্যাগ করা উচিত নয়, আপনাকে বের করে দেওয়াও ঠিক নয়। আপনি তো নিঃস্বদের সাহায্য করেন, তাঁদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন, নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করেন। তাই আমি আপনার সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। আপনি নিজ শহরে ফিরে গিয়ে আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইবনুল দাগিনার কথায় আৰু বকর (রা) মক্কায় ফিরে এলেন। বিকেলের দিকে ইবনুল দাগিনা কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে বলল, ‘আবু বকরের মতো ব্যক্তির জন্মভূমি ত্যাগ করা উচিত নয়। তাঁকে এখান থেকে বের করে দেওয়াও ঠিক হতে পারে না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করে দেবেন, যিনি নিঃস্বদের সাহায্য করেন, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেন, নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করেন?’ ইবনুল দাগিনা ঘোষণা করলেন, ‘হে মক্কার লোকেরা।

আপনারা কি আবু বকরের (রা) ওপর আমার সুরক্ষা গ্রহণ করবেন? এখানে উল্লেখ্য, ইবনুল দাগিনা ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। কুরাইশরা তার এই সুরক্ষা দেওয়া মেনে নিল। তারা তাকে বলল, ‘তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন ঘরে বসে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত করেন; সেখানেই ইচ্ছামাফিক কোরান তেলাওয়াত করেন। কিন্তু তিনি যেন এর দ্বারা আমাদেরকে কষ্ট না দেন। আর তিনি যেন প্রকাশ্যে কিছু না করেন। কারণ, আমরা ভয় পাই যে আমাদের ছেলেমেয়েরা ফিতনায় পড়ে যেতে পারে।’ প্রসঙ্গত বলতে হয়, সেই সময়ে আবু বকরই (রা) ছিলেন একমাত্র সাহাবি যিনি প্রকাশ্যে আল্লাহর ইবাদত করতেন। কুরাইশরা চায়নি তিনি জনসাধারণের মাঝে ইবাদত করুক।

ইবনুল দাগিনার এসব কথা শোনার পর আবু বকর (রা) নিজের ঘরে বসেই ইবাদত করতে শুরু করেন। কিছুদিন পর তাঁর মনে একটি মসজিদ তৈরি করার ইচ্ছা জাগলে তিনি নিজের ঘরের পাশেই একটি মসজিদ তৈরি করে নেন। এরপর থেকে তিনি সেই মসজিদেই নামাজ আদায় করতে ও কোরান তেলাওয়াত করতে লাগলেন। ইতিহাসের নিরিখে আবু বকরই (রা) প্রথম ব্যক্তি যিনি মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে তিনি এর জন্য আলাদাভাবে কোনো কাঠামো তৈরি করেননি, মূলত তাঁর বাড়িটিকেই একটু বর্ধিত করে ইবাদতের জন্য একটি ঘর তৈরি করেন।

কিছুদিনের মধ্যেই আবু বকরের মসজিদের পাশে মক্কার কুরাইশ নারী ও শিশুরা ভিড় করতে লাগল। তারা তাঁকে নামাজ পড়তে ও কোরান তেলাওয়াত করতে দেখে আশ্চর্য হতো এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। উল্লেখ্য, আবু বকরের (রা) তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর। তিনি নামাজের মধ্যে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নাকাটি করতেন। কোরান তেলাওয়াত করার সময় তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। মক্কার বাড়িগুলো ছিল ছোট, একটি অপরটির খুব কাছাকাছি। ফলে রাতের নিস্তব্ধতায় খুব সহজেই অন্য বাড়িগুলোতে তেলাওয়াতের শব্দ শোনা যেত।

 

আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এই পুরো ব্যাপারটি নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল। তারা ইসল দাগিনাকে ডেকে বলল, ‘আবু বকরকে তোমার সুরক্ষা দেওয়া আম মেন নিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত ঘরে বসে করবেন। কিন্তু সেই শর্ত তিনি ভঙ্গ করেছেন; তিনি নিজের ঘরের পাশে একটি মসজিদ তৈরি করে প্রকাশ্যে নামাজ পড়া ও কোরান তেলওয়াত শুরু করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের নারী ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর ইবাদত ঘরের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে এখনও তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা প্রকাশ্যে করতে চান, তবে তাঁর প্রতি তোমার সুরক্ষা তুলে নাও। আমরা তোমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাই না, আবু বকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করতে দিতে পারি না।

ইবনুল দাগিনা আবু বকরকে (রা) গিয়ে বললেন, ‘আপনি অবশ্যই জানেন, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছি। আপনাকে তা মেনে চলতে হবে, অন্যথায় আপনাকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে আমাকে মুক্তি দিন। আমি চাই না, আরববাসী জানুক আমার সঙ্গে করা চুক্তির অসম্মান হয়েছে।’

আবু বকর (রা) তাঁকে বললেন, ‘আমাকে সুরক্ষা দেওয়ার চুক্তি থেকে আমি আপনাকে মুক্তি দিচ্ছি। আল্লাহর সুরক্ষার ওপরই আমি সন্তুষ্ট।” [সহিহ বুখারি, ৩৯০৫] তারপর থেকে মক্কায় আবু বকরকে (রা) রক্ষা করার আর কেউ ছিল না। এ কারণেই তিনি যখন নবিজিকে (সা) শ্বাসরোধ করার হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন, তখন মুশরিকরা তাঁকে অনেক মারধর করেও পার পেয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর বাড়ির ভেতরে ছিলেন।

আরো পড়ূনঃ

Leave a Comment