প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম, জাহেলি আরবদের বিষয়ে একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, তারাও আমাদের (মুসলিমদের) মতোই আল্লাহ তায়ালার একই নাম ও গুণাবলিতে বিশ্বাস করত। তারা লাত ও হুবাল ইত্যাদির প্রতিমা তৈরি করলেও কখনই আল্লাহর মূর্তি তৈরি করেনি। কারণ, তারা জানত যে আল্লাহ তাদের স্রষ্টা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী।

আল্লাহ পবিত্র কোরানে বেশ কয়েকটি স্থানে বলেছেন: “(হে রসুল) তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘কে তাদের সৃষ্টি করেছেন?’, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।” [সুরা জুখরুফ, ৪৩:৮৭] “(হে রসুল) তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘কে আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন?’, তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আল্লাহ।” [সুরা জুমার, ৩৯:৩৮ ) “তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, ‘মাটি শুকিয়ে যাওয়ার পর আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে কে তাকে আবার প্রাণ দেয়?”, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’।” [সুরা আনকাবুত, ২৯:৬৩] “বলো, ‘কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবনের উপকরণ সরবরাহ করেন? কার রয়েছে পরিপূর্ণ ক্ষমতা তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির ওপর? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে নির্গত করেন, আর জীবিতকে মৃত করেন?

আর কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন?” তখন তারা বলবে, ‘আল্লাহ।” (সুরা ইউনুস, ১০:৩১] সুতরাং মহানবি মুহাম্মদ (সা) যখন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী নিয়ে আরবদের কাছে উপস্থিত হন, তখন তাতে নতুন কোনো ঈশ্বরের ধারণা ছিল না। তারা জানত যে আল্লাহ তাদের প্রতিপালক। তাদের পৌত্তলিকতার ধরনটি এখনকার সময়ের পৌত্তলিকতার মতো ছিল না। আবার যদিও তারা বলত যে আল্লাহই তাদের প্রতিপালক এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিপালক নেই, তবুও আমরা তাদেরকে মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না। কারণ তারা প্রতিমা পূজা করত। তাদের যুক্তিতে।

 

প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

“আমরা এদের ইবাদত এজন্যই করি যে এরা আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছে দেবে।” [সুরা জুমার ৩৯:৩) অর্থাৎ তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহ। তাদের কথা অনুসারে, প্রতিমাগুলো কেবল মধ্যস্থতাকারী মাত্র । আর আল্লাহ বলেন: *এরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদত করে যা তাদের কোনো রকম ক্ষতি করতে পারে না, (আবার) তা তাদের কোনো রকম উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এগুলো হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের

সুপারিশকারী।” [সুরা ইউনুস, ১0-১৮] তাদের ধারণা অনুসারে, তারা এত বেশি পাপী যে তাদের পক্ষে সরাসরি আল্লাহর উপাসনা করা সম্ভব নয়। মূর্তিগুলোকে তারা পবিত্র মনে করত, সেখান থেকেই তাদের বিশ্বাস যে পবিত্রতম আল্লাহর কাছে পৌঁছতে হলে পবিত্র মূর্তিগুলোর মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এখানে লক্ষণীয়, তারা কিন্তু আল্লাহকে অস্বীকার শিরক করছিল না। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে আল্লাহ তাদের স্রষ্টা এবং প্রতিপালক। তবুও তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করত।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, আমাদের সময়েও কিছু মুসলিম একই রকম মানসিকতা পোষণ করে থাকে। একদিকে তারা দাবি করে যে আল্লাহ তাদের পালনকর্তা, আবার অন্যদিকে তারা মনে করে পাপের কারণে তারা সরাসরি আল্লাহর ইবাদত করার উপযুক্ত নয়, সে জন্য সুপারিশকারী বা মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন। আরবরা যেসব কারণে আল-লাত, আল- মানাত বা আল-উজ্জার কাছে যেত, এখনকার অনেক মুসলিমও সেই একই কারণে পির, শায়েখ বা ওয়ালির কাছে যায়।

তাদের ধারণা, আল্লাহর কাছে পৌঁছতে হলে কোনো সাধু-সন্ত, পির-দরবেশ কিংবা শায়েখের মাধ্যমে যেতে হবে। এর সঙ্গে জাহেলি যুগের মানসিকতার বাস্তবিক কোনো তফাৎ নেই। কেউ বলতে পারে, “তোমার কত বড় সাহস যে তুমি আল-লাতের সঙ্গে আমার পির বা শেষের তুলনা কর।” এর জবাবে পাল্টা প্রশ্ন হলো, “ওই পির বা শায়েখের সঙ্গে আল-লাতের পার্থক্যটা আসলে কী?”

বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আল-লাত কোথা থেকে এবং কীভাবে এল তা আমাদের জানতে হবে। ওই অঞ্চলে আল-লাত নামের একজন উদার মনের মহিলা ছিলেন, যিনি কাবায় আগত হজযাত্রীদের এক ধরনের সুপি বানিয়ে খাওয়াতেন। ‘আল-লাত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি সাপ তৈরির জন্য উপকরণ পেষণ করেন এবং তৈরি করেন।

 

প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

এটি তাঁর নাম ছিল না, ছিল তাঁর উপাধি। মক্কার দিকে আগত লোকদেরকে পথে দাঁড়িয়ে সাপ খাওয়াতেন। সুতরাং লোকেরা তাঁকে ‘আল-লাত’ নামে ডাকত। যেহেতু তিনি একজন ভালো ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন, তাই তাঁর মৃত্যুর পর লোকেরা তাঁর স্মৃতিস্বরূপ একটি মুর্তি বা তৈরি করেছিল। তারপর তারা এসে আল-লাতের মূর্তির ওপর তাদের দেহ ঘষে এবং তার ওপর হাত রেখে আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করত।

এভাবেই ধীরে ধীরে মূর্তিটি উপাসনার বস্তুতে পরিণত হয়। আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি যার উপাসনা করা হয় তিনি হলেন যিশুখ্রিষ্ট। যিশু কি মন্দ লোক ছিলেন? তিনি ছিলেন অন্যতম একজন নবি মানুষ যে সব সময় মন্দ লোকদের দ্বারা বা তাদের উপলক্ষে ভুল পথে চালিত হবে এমন কোনো কথা নেই। পৃথিবীতে অল্প কিছু মানুষই শয়তানের উপাসনা করে।

অন্যদিকে যিশুখ্রিষ্টের উপাসনাকারীর সংখ্যা কোটি কোটি। দেখা যাচ্ছে, ভালো কিছুকে বা ভালো কোনো মানুষকে উপলক্ষ করেই বেশির ভাগ পথভ্রষ্টতার ঘটনা ঘটে থাকে। তাই আল্লাহর কাছে পৌঁছার জন্য কোনো মাধ্যম দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নবি করিমকে (সা) ‘রোল মডেল’ হিসেবে গ্রহণ করলেই হবে।

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, জাহেলি আরবদের শিরকের ধরন ছিল অন্যরকম। তাদের শিরক এখনকার সময়ের হিন্দু কিংবা জোরাষ্ট্রিয়ানদের মতো শিরক নয়, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যকে বিশ্বাস করে। আরবরা ইব্রাহিম (আ), ইসমাইল (আ) ও ইসহাকের (আ) ঈশ্বর আল্লাহকেই ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করত। মুসলিমরাও সেই ঈশ্বরেই বিশ্বাস করি। আরবদের শিরকের ভিত্তি হচ্ছে, তারা আল্লাহকে খুব বেশি পবিত্র বলে মনে করত, এবং সেজন্য ভারত যে আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন।

আরো পড়ূনঃ

 

Leave a Comment