দুজনের মধ্যে প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেন নবিজির (সা) চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা)। বর্ণিত আছে, হামজা ছিলেন বিখ্যাত তিরন্দাজ, মক্কার অন্যতম বলবান পুরুষ। তিনি মাঝে মাঝেই অভিযানে যেতেন, ফেরার সময় কাবায় তাওয়াফ করে বাড়ি যেতেন। একদিন কোনো কারণে আবু জেহেল খারাপ মেজাজে ছিল। সে নবিজি (সা) ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ওপর এমন করে অভিশাপ দিতে শুরু করল যা সে আগে কখনো করেনি। সে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যায়; সে পর্যন্ত নবিজি (সা) চুপ করে ছিলেন। ঘটনাটি দেখে বনু হাশিমের এক নারী অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে বলল, “সে (আবু জেহেল) নিজেকে কি মনে করে যে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে অভিশাপ দিচ্ছে?” উল্লেখ্য, ওই নারী মুসলিম ছিল না; কিন্তু এটা ছিল তাদের বংশের মান-সম্মানের ব্যাপার।

হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
হামজা অভিযান থেকে ফিরে এলে কয়েকজন নারী তাঁকে ভর্ৎসনা করতে লাগল।
নারীরা: তুমি কেমন চাচা? আর কী ধরনেরই বা নেতা? তোমার আপন ভাতিজাকে অপমান করলে তোমরা কেউ তাঁকে রক্ষা করতে দাঁড়াও না! (অর্থাৎ ‘বনু হাশিমের বংশমর্যাদা রক্ষার জন্য তোমার চেষ্টা কোথায়?’)। হামজা: কী হয়েছে?
নারীরা: আবু জেহেল অনেকক্ষণ ধরে মুহাম্মদকে (সা) অপমান ও হেনস্থা করেছে, কিন্তু একজন মানুষও তাঁর পক্ষে দাঁড়ায়নি। (আবু জেহেল যা যা বলেছিল তা শুনে রাগে হামজার রক্ত রাগে টগবগ করে ফুটতে শুরু করল। এটা তাঁর জন্য। আত্মমর্যাদার ব্যাপার। )
হামজা: এটি কি সে জনসমক্ষে করেছে? অন্য মানুষরা কি এই অপমানজনক ঘটনা দেখেছে?
নারীরা: পুরো মক্কা শহর দেখেছে। ঘটনা সবার সামনেই ঘটেছে। হামজা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে তির- ধনুক নিয়ে কাবার দিকে ছুটে গেলেন। তিনি সোজা আবু জেহেলের কাছে গিয়ে ধনুক দিয়ে তার মুখমণ্ডলে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, বেশ খানিকটা রক্ত বেরিয়ে এল। হামজা রাগান্বিত স্বরে বললেন, “আমার ভাতিজাকে অপমান করার সাহস তুমি কীভাবে পাও?” রাগে-উত্তেজনায় তিনি বুঝতেও পারছিলেন না তাঁর ঠিক কী বলা উচিত।

একপর্যায়ে বলে ফেললেন, “আমিও তার ধর্মের অনুসারী!” এটা তিনি নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে বলেননি। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো, ‘এখন তুমি কী করবে?’ তাঁর এই কথা শুনে আশেপাশের লোকজন অবাক হয়ে গেল, হতবাক হয়ে গেলেন হামজা কারণ তিনি তো শুধু ভাতিজা মুহাম্মদকে (সা) রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করতে চাননি।
হামজা আবু জেহেলকে আঘাত করলে সেখানে উপস্থিত তার গোত্র বনু মাখজুমের লোকেরা হামজাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলো। আবু জেহেল বাধা দিয়ে বলল, “ওকে ছেড়ে দাও, কারণ আমি ওর ভাতিজাকে আজ যতটা অপমান করেছি, ততটা এর আগে কখনো করিনি।” এই ঘটনার পর হামজা কিছুটা বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘরে ফিরলেন। মনে মনে ভাবলেন, ‘আমি এখন কী করব? জানি না এটা সত্য ধর্ম কি না।’
এ রকম মানসিক অবস্থায় তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন আমি কুরাইশদের একজন নেতা। আমি এমন কিছু বলেছি যা আমি আর ফিরিয়ে নিতে পারি না। সুতরাং যদি বিষয়টি সত্য হয় তবে আমার হৃদয়কে এর দিকে চালিত করুন। আর যদি সত্য না হয়, তাহলে আমাকে এখনই মৃত্যু দান করুন।” সেই রাতটি ছিল হামজার জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ রাত।

পরদিন হামজা নবিজির (সা) কাছে গিয়ে পুরো ঘটনাটি খুলে বললেন। নবিজি (সা) শান্তভাবে তাঁকে বোঝাতে লাগলেন। একপর্যায়ে হামজা বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সত্য কথা বলছ। এখন আর আমি আমার পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে যেতে চাই না।” এই হলো হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের (রা) ইসলাম গ্রহণের কাহিনি।
প্রথমদিকে তিনি ইসলামের প্রতি আন্তরিক ছিলেন না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর অন্তরকে সঠিক পথ দেখান এবং সেদিকে চালিত করেন। পরে ওহুদের যুদ্ধে তিনি। ‘সাইয়েদ আল-শুহাদা (শহিদদের নেতা) হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। হামজার ইসলাম গ্রহণ ছিল নবিজির (সা) জন্য ভীষণ উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। হামজা ছিলেন সেই সময় পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ। তিনি ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের ছেলে এবং আবু তালিবের ভাই। সুতরাং হামজার ইসলাম গ্রহণের পর মুশরিকরা নবিজি (সা) ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কার্যকলাপ কিছুটা কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল।
আরো পড়ূনঃ
