সারিয়া আল-খাবাত এবং তিমির মাংস খাওয়ার ফিকহ | খন্দক ও হুদায়বিয়ার মাঝে ছোট ছোট অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সারিয়া আল-খাবাত এবং তিমির মাংস খাওয়ার ফিকহ | খন্দক ও হুদায়বিয়ার মাঝে ছোট ছোট অভিযান, এবারের অভিযানের নাম সারিয়া আল-থাবাত (শুকনো পাতার অভিযান)। এমন নামকরণের পেছনের কারণ হলো, এই অভিযানে সাহাবিরা একবার ‘খাবাত’ বা শুকনো পাতা খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। অভিযানের সময়টা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই, তবে সম্ভবত তা হুদায়বিয়ার সন্ধির কিছুকাল আগের ঘটনা।

সারিয়া আল-খাবাত এবং তিমির মাংস খাওয়ার ফিকহ | খন্দক ও হুদায়বিয়ার মাঝে ছোট ছোট অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সারিয়া আল-খাবাত এবং তিমির মাংস খাওয়ার ফিকহ | খন্দক ও হুদায়বিয়ার মাঝে ছোট ছোট অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবি করিম (সা) আবু উবায়দা আমর ইবনুল জাররাহের নেতৃত্বে ৩০০ লোকের একটি বড় বাহিনী পাঠিয়েছিলেন কুরাইশদের একটি কাফেলাকে বাধা দিতে। কাফেলাটি সম্ভবত সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। তবে মুসলিমরা সেবার সফল হতে পারেননি। কুরাইশদের কাফেলা মুসলিম বাহিনীকে এড়িয়ে চলে যেতে সক্ষম হয়। মুসলিমরা দূর থেকে কাফেলাটিকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করেন, ধাওয়া করতে করতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যান; তাঁদের খাদ্যের মজুত কমে আসতে   থাকে। একসময় তা শেষ হয়ে এলে আবু উবায়দা দলের প্রত্যেককে নিজের কাছে গচ্ছিত সব খাবার তাঁর কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সব খাবার একত্র করে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সমান পরিমাণ রেশনের ব্যবস্থা করেন।

কিছু সময় পরে রেশনের পরিমাণও কমে আসে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তাঁদের খাওয়ার জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন একটি খেজুর বরাদ্দ হয়। এক সময় তা-ও শেষ হয়ে যায়। জাবির ইবনে আবদিল্লাহ বর্ণনা করেছেন, তাঁরা নিজেদের মুখে খেজুরের বীজ ঢুকিয়ে সারা দিন চুষতেন এবং পানি পান করতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা বেঁচে থাকার জন্য খাবাত (কাঁটা ঝোপের শুকনো পাতা) খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশেষে তাঁরা মদিনার কিছুটা কাছাকাছি ইয়ানৰু নামক সমুদ্রতীরবৱর্তী স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সেখানে তাঁরা দেখতে পান, একটি বিশাল আকৃতির তিমি (সম্ভবত নীল তিমি) সমুদ্রের তীরে মরে পড়ে আছে। তিমিটা এমনই অবিশ্বাস্য রকমের বড় ছিল যে, সহিহ বুখারির বর্ণনা অনুসারে, ১৩-১৪ জন সাহাবি তিমিটির চোখের কোটরে বসে থাকতে পেরেছিলেন। সাহাবিদের যখন অনাহারে মৃত্যুর উপক্রম হয়, ঠিক তখনই আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল তাদের এটি উপহার হিসেবে দেন। তারপর ওই ৩০০ মানুষ সেখানে শিবির স্থাপন করে পুরো এক মাস ধরে এই তিমির মাংস খেয়েছেন। জানা যায়, সাহাবিরা অভিযান থেকে ফেরার সময় আগের চেয়ে বেশি হৃষ্টপুষ্ট ছিলেন।

তাঁরা এক মাস পরে অবশিষ্ট মাংস সাথে নিয়ে মদিনায় ফিরে আসেন। তাঁরা নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করেন, “আমরা যা করেছি (অর্থাৎ মৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া) তা কি অনুমোদিত?”

নবিজি (সা): তোমাদের কাছে কি এখন এর মাংস কিছু অবশিষ্ট আছে?

সাহাবিরা: হ্যাঁ। নবিজি (সা): তা আমার কাছে নিয়ে এসো।

সাহাবিরা মাংস এনে দিলে নবিজি (সা) তা খেয়ে নেন। তিনি সম্ভবত তা খেয়েছিলেন এটা প্রমাণ করার জন্য যে, সামুদ্রিক খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল। আল্লাহ তায়ালা কোরানে বলেছেন:

“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে,

তোমাদের ও মুসাফিরদের আহারের জন্য।” [সুরা মায়েদা, ৫:৯৬] সুতরাং সব ধরনের সামুদ্রিক খাবার, সমুদ্রে বসবাসকারী সব প্রাণী আমাদের জন্য হালাল। সেগুলো খাবার টেবিলে কীভাবে এল, কে সেগুলো ধরেছে বা শিকার করেছে, কীভাবে শিকার করা হয়েছে, সেগুলো ইতিমধ্যে মৃত ছিল কি না-এসব বিবেচ্য বিষয় নয়।

 

সারিয়া আল-খাবাত এবং তিমির মাংস খাওয়ার ফিকহ | খন্দক ও হুদায়বিয়ার মাঝে ছোট ছোট অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

জয়নব বিনতে জাহশের সঙ্গে বিয়ে

সেই সময়েই নবিজি (সা) জয়নব বিনতে জাহশকে বিয়ে করেন। এটি পুরো সিরাহের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। [৬৯তম পর্বে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।]

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment