সাদ ইবনে মুআদের বিচার | বনু কুরায়জা উপজাতি, বনু কুরায়জা আত্মসমর্পণ করবে – পরদিন সকালে এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আউস উপজাতির সাহাবিরা নবিজিকে (সা) ঘিরে ধরে বনু কুরায়জার পক্ষ হয়ে অনুনয়-বিনয় করতে থাকেন। নবিজি (সা) কিন্তু তখনও তাঁর সিদ্ধান্ত জানাননি। আউসদের একজন বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি খাজরাজদের মিত্রকে (বনু কায়নুকাকে) যেমন ছেড়ে দিয়েছিলেন, আমাদের মিত্রকেও (বনু কুরায়জাকে) তেমনি ছেড়ে দিন। কিন্তু বনু কায়ানুকা যা করেছিল এবং বনু কুরায়জা যা করেছে এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। তবু মানবিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই আউসরা তাঁদের মিত্রদের জন্য মিনতি করতে থাকলেন।
সাদ ইবনে মুআদের বিচার | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

একপর্যায়ে নবিজি (সা) বললেন, “তাদের ব্যাপারে কী করা যায় সেই সিদ্ধান্ত যদি তোমাদের (আউসদের) মধ্য থেকেই একজন নেয় তাহলে কি তোমরা খুশি হবে?”
আউসরা: অবশ্যই!
নবিজি (সা): আমি (সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য) তোমাদেরই নেতা সাদ ইবনে মুআদকে বেছে নিলাম ।
নবিজি (সা) সাদ ইবনে মুআদকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন বিষয়টার ব্যাপারে আউসদের সংবেদনশীলতার কারণে। নবিজি (সা) যদিও জানতেন, তিনি যা বলবেন সবাই তা মেনে নেবে, তবু তিনি একজন সত্যিকারের নেতার মতো ভাবলেন, অনুগামীদের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
উল্লেখ্য, এইসব আলোচনাই হচ্ছিল দুর্গের বাইরে। বনু কুরায়জা তখনও দুর্গের ভেতরে ছিল, তারা এই আলোচনার কিছুই জানত না। মুহাজির ও খাজরাজরাও এই আলোচনায় অংশ নেয়নি। তা ছাড়া জাহেলি যুগে খাজরাজদের সঙ্গে বনু কুরায়জার শত্রুতা ছিল, তাই তাঁরা এসবের মধ্যে ঢুকতে চায়নি । নবিজির (সা) এই কথায় সাহাবিদের একটি দল (বনু সালামা গোত্র) এত খুশি হলো যে সাদ ইবনে মুআদকে খবরটি দিতে তৎক্ষণাৎ মদিনায় ছুটে গেল।

সাদ তখনও গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁবুতেই রয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সাহাবিদের মধ্য রুফায়দা আল-আসলামিয়া নামের একজন নার্স ছিলেন যিনি যুদ্ধাহতদের সেবা-শুশ্রূষা করছিলেন। রুফায়দার একটি তাঁবু ‘মিনি হাসপাতাল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সাদ ইবনে মুআদ ২৫ দিন ধরে সেই তাঁবুতেই ছিলেন। তাঁর রক্তক্ষরণ থামছিল না। তাঁর মৃত্যু ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার।
যা যা ঘটেছে, তার সবই বনু সালামার নেতারা সাদকে খুলে বললেন, তারপর তাঁকে একটি খচ্চরের উপর শুইয়ে ধীরে ধীরে বনু কুরায়জার কাছে নিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে আউসের সাহাবিরা সাদকে বললেন, “আপনাকে ক্ষমাশীল হতে হবে।” তাঁরা তাঁকে জাহেলি যুগে বনু কুরায়জার সঙ্গে তাঁদের উপজাতির বন্ধুত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। সবাই যখন তাঁকে এসব কথা বলছিলেন, তখন তিনি বললেন, “সাদের এখন কোনো সমালোচকের সমালোচনার পরোয়া করার সুযোগ নেই, যেহেতু ব্যাপারটা আল্লাহ এবং তার রসুলকে (সা) নিয়ে।” অর্থাৎ আমি এখন মারা যাচ্ছি। যদি আমি এখনও বিশ্বস্ত না হতে পারি, তবে আমার বিশ্বস্ততা দেখানোর সময় আর কখন হবে? সাদের এই কথা শুনে আউসরা বুঝে গেলেন রায় কী হতে পারে।

সাদ বনু কুরায়জার দুর্গের কাছে পৌঁছলে নবিজি (সা) সমবেত আনসারদের উদ্দেশে বললেন, “তোমরা তোমাদের নেতাকে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাও।” পুরো সিৱাহে সাদ ইবনে মুআদ (রা) ছাড়া এমন একজনও নেই, যাঁকে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়ার জন্য নবিজি (সা) সাহাবিদের নির্দেশ দিয়েছেন।
নবি করিম (সা) এরপর সাদ ইবনে মুআদকে বললেন: “তোমার লোকেরা (আউস) তোমাকে এদের (বনু কুরায়জা) কৃতকর্মের বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছে।”
সাদ উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে বললেন, “তোমরা আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলো, আমি যা রায় দেব তা কি তোমরা শুনবে এবং মানবে?” আউসদের সবাই বললেন, “হ্যাঁ।”
সাদ নবিজির (সা) কাছে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবশত মুখখানি নামিয়ে বললেন, “এবং আপনিও, হে আল্লাহর রসুল (অর্থাৎ আপনিও কি আমার রায় মেনে নেবেন?”
নবিজি (সা) বললেন, “হ্যাঁ।”
সাদ নির্দ্বিধায় তক্ষুনি তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন: “আমার রায় হলো, তাদের পুরুষদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, তাদের বিষয়সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে, এবং তাদের নারী ও শিশুদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করতে হবে।” তিনি এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে নবিজি (সা) বললেন, “হে সাদ, আল্লাহর কসম, তুমি সাত আসমান থেকে আসা আল্লাহর বিচারই তাদের জন্য নির্ধারণ করেছ।”
আরও পড়ুনঃ
