সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় | চুক্তি ও মদিনার সংবিধান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় | চুক্তি ও মদিনার সংবিধান,

  • (ক) এই সংবিধানের অনুসারীদের জন্য ইয়াসরিবের অভ্যন্তরের এলাকা ‘হারাম’। অর্থাৎ এটি একটি পবিত্র ভূমি, এবং হারামের জন্য প্রযোজ্য সব বিধিনিষেধ এখানেও অনুসরণ করা আবশ্যক।
  • (খ) সংবিধানে মদিনার সীমানা সম্পর্কে চারটি দিক স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। “এটিই হারাম।” এর পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি ‘লাব্বা’ (আগ্নেয় পাহাড়); দক্ষিণ ও উত্তরে আয়র ও সাওরের পাহাড়। তখন বেশির ভাগ মানুষই হারামের অভ্যন্তরে বাস করত।
  • (গ) সংবিধানে উল্লেখ আছে, “এই সংবিধানের অনুসারী বিভিন্ন দলের মধ্যে কোনো মতবিরোধ দেখা দিলে কিংবা কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হলে সে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুল সিদ্ধান্ত নেবেন।” এখানে মতবিরোধ বলতে মুসলিম ও ইহুদি, ইহুদি ও পৌত্তলিক, পৌত্তলিক ও মুসলিম ইত্যাদির মধ্যে মতবিরোধ বুঝতে হবে।
  • (ঘ) আরও উল্লেখ আছে, “মুসলিমরা কোনো বিদ্রোহীকে সাহায্য বা সমর্থন করতে পারবে না। তাদের মধ্যে যে তা করবে সে আল্লাহ, সে ফেরেশতাগণ ও সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ প্রাপ্ত হবে। তার কোনো নেক আমল গ্রহণ করা হবে না।”
  • (ঙ) সংবিধান অনুসারে, “যে ব্যক্তি মদিনা ত্যাগ করবে সে পাবে; যে ব্যক্তি মদিনায় অবস্থান করবে সেও নিরাপত্তা পাবে। তবে অন্যায়কারী ও পাপাচারীরা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ ধার্মিক ও সৎকর্মকারীদের রক্ষা করবেন।” সংবিধানের শেষ বাক্যটি ছিল: ” এবং মুহাম্মদ (সা) তাঁর (আল্লাহর) রসুল।”

 

সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় | চুক্তি ও মদিনার সংবিধান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় | চুক্তি ও মদিনার সংবিধান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সংবিধানটির ভুল ব্যাখ্যা

কিছু লোক সংবিধানটির গুরুত্ব অতিরঞ্জিত করেছে, আবার অন্যরা এটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। সংবিধান বিষয়ে এক পক্ষের চরম অবস্থান: ১৯৮০ সালের দিকে আমাদেরই এক মুসলিম নেতা অনেক গবেষণা করে বলেন, টমাস জেফারসন নাকি মদিনা সংবিধান পড়েছিলেন এবং আমেরিকার পুরো সংবিধান তিনি তার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করেন। ভালো কিছু দেখলেই তাকে কোনোভাবে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, এবং বলতে হবে, ‘আমরাই এটা আবিষ্কার/চালু করেছিলাম’—এটা এক ধরনের হীনম্মন্যতার পরিচায়ক।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সন্দেহাতীতভাবে মদিনার সংবিধান সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। পশ্চিমা সভ্যতা এ থেকে কিছু বিষয় গ্রহণও করেছিল। তবে আমেরিকার পুরো সংবিধান মদিনার সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল- এমন দাবি করা বেশ বাড়াবাড়িই বলতে হবে। সংবিধান বিষয়ে আরেক পক্ষের চরম অবস্থান: কিছু অমুসলিম বলে থাকে যে নবিজির (সা) খারাপ উদ্দেশ্য ছিল (যেমন: ‘তিনি নাকি ইহুদিদের বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন’)।

 

সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় | চুক্তি ও মদিনার সংবিধান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তারা অভিযোগ করে, তিনি ইহুদিদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছিলেন। তারা বলে, এই সংবিধান ছিল ইহুদি-বিদ্বেষী (অ্যান্টি-সেমেটিক)। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি সেরকম নয়, কারণ মদিনায় ইহুদিদের যে বাধ্যবাধকতা ছিল তা মুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। প্রকৃত সত্য আছে এই দুই চরম অবস্থানের মাঝখানে। মদিনার সংবিধান ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ছিল। কীভাবে ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সে বিষয়ে সামগ্রিক দর্শন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই সংবিধান থেকে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment