শিবির স্থাপন | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

শিবির স্থাপন | ওহুদের যুদ্ধ-২, বদরের যুদ্ধের মতো ওহুদের যুদ্ধ সম্পর্কেও সাহাবিদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনার বিবরণ রয়েছে। কিন্তু কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছিল তা নির্ণয় করতে গেলে সমস্যা দেখা দেয়। ধরুন, আপনি সারাদিন ধরে খুব জটিল একটি কাজে খাটাখাটুনি করে শেষ করলেন। দিনশেষে আপনি আপনার সন্তানদের কাছে যদি সেই কাজের বর্ণনা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিটি ঘটনার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন না। উল্লেখ করার মতো একটি বা দুটি বড় ঘটনাই বলবেন। একইভাবে সাহাবিরাও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে গেছেন। তাই যুদ্ধের ঘটনাগুলো সময়ের ক্রমানুসারে সাজানোর ক্ষেত্রে জটিলতা রয়ে গেছে।

ওহুদের যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরও প্রকট, কারণ ওহুদে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি পাঁচটি ভিন্ন সিরাহের বই পড়েন, তবে এই যুদ্ধের ঘটনাগুলোর পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন কালানুক্রমিক বর্ণনা পাবেন। তাই আমরা এই পর্বে এবং পরের দুই-তিনটি পর্বে যুদ্ধের ঘটনাগুলো সাজানোর চেষ্টা করব। সিরাহের অন্যান্য বইতে সেগুলোর বর্ণনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে।

 

শিবির স্থাপন | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

শিবির স্থাপন | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

শিবির স্থাপন

শাওয়াল মাসের ১৩ তারিখের দিকে কুরাইশরা মদিনা শহরের কাছাকাছি চলে আসে। ওই বছর ১৩ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার আর ১৪ তারিখ ছিল শুক্রবার । ইবনে ইসহাক ও অন্যান্য সিরাহ লেখকের মতে, আসল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শনিবার সকালে। এখন আমরা যুদ্ধের আগের তিন দিনের ঘটনাগুলো সাজানোর চেষ্টা করব। ১৩ তারিখের মধ্যেই কুরাইশ ও মুসলিমরা পরস্পর থেকে এমন দূরত্বে চলে আসে যেখান থেকে পরস্পরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়।

নবি করিম (সা) সিদ্ধান্ত নেন, কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করার আগেই, অর্থাৎ ১৪ তারিখের মধ্যেই, মুসলিম বাহিনীকে ওহুদ গিয়ে পৌঁছুতে হবে। এ কারণেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে ওহুদের উদ্দেশে যাত্রা করেন, কয়েকটি বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) খুব গোপনে ওহুদের দিকে যাত্রা  করেন। মূল পথ দিয়ে না গিয়ে খেজুর গাছের ঝোপের ভেতর দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি একজন গাইড ভাড়া করেন। মূল রাস্তা দিয়ে যাননি এই কারণে যে তাতে তাঁদের অবস্থান আগেভাগেই জানাজানি হয়ে যেত।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নবিজি (সা) কুরাইশদের আগেই ওহুদে গিয়ে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, যাতে করে তিনি শিবির স্থাপন করার জন্য একটি সুবিধাজনক স্থান আগে আগে বেছে নিতে পারেন। বর্ণিত আছে, মুসলিমরা খেজুর গাছের ঝোপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় একজন অন্ধ বৃদ্ধ মুনাফেক তাদের চলাচলের আওয়াজ শুনতে পায়। সে বলে, “তোমরা কারা? তোমরা কি মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর সঙ্গী? যদি তা হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আমার জমির ওপর দিয়ে যেতে দেব না।”

তারপর সে সাহাবিদের বাধা দেওয়ার জন্য তাদের দিকে নুড়ি-পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে । সাহাবিদের মধ্যে একজন তাকে শায়েস্তা করার জন্য তলোয়ার উঁচিয়ে এগিয়ে গেলে নবিজি (সা) তাকে থামিয়ে বলেন, “তাকে ছেড়ে দাও। সে যেমন চোখে দেখতে পায় না, অন্তরের দিক থেকেও তেমনি অন্ধ ।”

 

শিবির স্থাপন | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজির (সা) কথায় সাহাবিরা তার কিছু করেননি। শাওয়ালের ১৪ তারিখ বিকেলে নবিজি (সা) দলবল নিয়ে ওহুদে পৌঁছেন। একটি বর্ণনা অনুসারে, তাঁরা জোহরের সময় হওয়ার আগেই দুপুরের শুরুর দিকে জুমার নামাজ আদায় করেন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি জুমা আর জোহরের নামাজের সময় আলাদা? এটি একটি প্রাচীন বিতর্কের বিষয়। এ বিষয়ে হানবালি মত হলো, জুমার নামাজ জোহরের নামাজ থেকে আলাদা। আমেরিকার অনেক মসজিদে এই নিয়মটি অনুসরণ করা হয় ।

অনুমান করা যায়, মুসলিমরা সেই শুক্রবারে বেলা আনুমানিক এগারটায় জুমার নামাজ আদায় করেন, আর দুপুর দুইটার মধ্যে ওহুদে পৌঁছেন। কুরাইশরা সেই খবর জানার পর একই স্থানের উদ্দেশে যাত্রা করে। এক সময় দুই বাহিনীই ওহুদে পৌঁছে যায়। তারপর রাত ঘনিয়ে আসে। পরের দিন সূর্যোদয়ের সময় তারা জানতে পারে যে, তাদের মধ্যে যুদ্ধ হতে চলেছে। সেই দিনটি ছিল শনিবার, শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment