যুদ্ধে সাবাথ | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

যুদ্ধে সাবাথ | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪, আবু সুফিয়ানের উদ্বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। সে ভাবল, যদি বনু কুরায়জা বিশ্বাসঘাতকতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে তারা মুসলিমদের সঙ্গে মিলে কুরাইশদের ওপর আচমকা আক্রমণ করে বসবে। ভাই সে সবাইকে বলল, “আমরা তা হতে দিচ্ছি না। আমরা আগামীকাল সকালেই তাদের আক্রমণ করতে যাচ্ছি।” সে আর দেরি না করে ইকরিমা ইবনে আবি জেহেলের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে বনু কুরায়জার কাছে পাঠাল তাদের একথা জানাতে যে পরের দিন সকালে আহজাব ও বনু কুরায়জা মিলে মুসলিমদের আক্রমণ করবে।

যুদ্ধে সাবাথ | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

যুদ্ধে সাবাথ | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কিন্তু আল্লাহ চেয়েছিলেন অন্য কিছু। ইকরিমার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বনু কুরায়জার কাছে গেল শুক্রবার আসরের ওয়াক্তের পরে। পরের দিনটি ছিল শনিবার অর্থাৎ সাবাথের দিন (১)। ইহুদিদের ধর্মমতে শনিবারে বিশ্রাম ও  উপাসনা করা ছাড়া আর কিছু করার বিধান ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের (মুসলিমদের) জন্য যেমন নামাজ, ইহুদিদের জন্য সাবাথ ঠিক তেমনই একটি ইবাদত । তারা এখনও একইভাবে তা পালন করে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ

কিন্তু কুরাইশরা কখনও ইহুদিদের সঙ্গে বসবাস করেনি, তাই সাবাথের এই রীতি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। ইহুদিরা কুরাইশ প্রতিনিধিদলকে বলল, “আগামীকাল শনিবার। আমরা তো শনিবারে যুদ্ধ করতে পারব না। আমাদেরকে কিছু সময় দাও। চলো, আমরা বরং রবিবারে যুদ্ধ করি।” কুরাইশরা এই কথার মধ্যে বিপদের সংকেত দেখতে পেল। তারা ভাবল: কেন তাদের আরও সময়ের প্রয়োজন? কেন আমাদেরকে ২৪ ঘণ্টা দেরি করতে হবে? মুহম্মদের কাছে গিয়ে খবর দিয়ে তারপর আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা একদম উপযুক্ত সময়!

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সেই সময় আগুনে ঘি দেওয়ার মতো কাব ইবনে আসাদও বলে বসল, “এমনকি রবিবারেও আমরা আক্রমণ করব না। আসলে যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের ৭০ জন লোককে আমাদের কাছে হস্তান্তর না করছ, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আক্রমণে যাব না।” প্রথমে সাবাথের জন্য যুদ্ধে যেতে দেরি করার কারণ দেখানো, তারপর ৭০ জন লোককে হস্তান্তর করার শর্ত—এসব শুনে ইকরিমা বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। সে ফিরে গিয়ে আৰু সুফিয়ানকে বলল, “বনু কুরায়জা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা বলছে, শনিবার এমন দিন, যেদিন তারা কোনো কাজ বা যুদ্ধ করে না।”

একথা শুনে আৰু সুফিয়ান রাগে জ্বলে উঠল। ঘটনাচক্রে বনু নাদিরের নেতা হুয়ায় ইবনে আখতাব সেই সময় কুরাইশদের সঙ্গে ছিল। আবু সুফিয়ান তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, “এই, সাবাথ জিনিসটা কী?” হুয়ায় তাকে ব্যাখ্যা করে বলার পরেও সে আবার জিজ্ঞেস করল, “শনিবার তো রবিবার ও শুক্রবারের মাঝখানের একটা দিন মাত্র। শনিবারের ব্যাপারটা আবার বিশেষ কী?” কিন্তু হুয়ায় আবারও জোর দিয়ে বলল যে, ইহুদিদের পক্ষে শনিবারে কিছুই করা সম্ভব নয়। আবু সুফিয়ান শুধু বলল, “লাভ এবং উজ্জার কসম, এটা তোমাদের দিক থেকে বিশ্বাসঘাতকতা।” সাবাথ বলে যে কিছু আছে, তা-ই সে বিশ্বাস করতে পারছিল না।

 

যুদ্ধে সাবাথ | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হুয়ায় তখন চরম উদ্বিগ্ন। সে চুপচাপ সেখান থেকে বেরিয়ে সরাসরি গিয়ে বনু কুরায়জার লোকদের অনুরোধ করল তারা যেন সাবাথ ভেঙে শনিবার যুদ্ধ করে। কাব ইবনে আসাদ এবার আরও রেগে গিয়ে বলল, “তুমি কোন সাহসে আমাদের সাবাথ ভাঙার কথা বলছ? তোমারই তো বরং আমাদের সঙ্গে তা পালন করা উচিত। তোমরা নিয়ম ভাঙতে পার। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমাদের মেরে ফেললেও সাবাথের নিয়ম ভাঙব না।”

আসলে কাব ঠিকই বলেছিল। সাবাথ ছিল তাদের শরিয়তেরই একটি অংশ; তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দশটি আদেশের মধ্যে একটি। মনের দিক থেকে কাব ছিল একজন ধার্মিক ব্যক্তি। সাবাথের নিয়ম ভেঙে যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধে সে বিজয়ী হতে চায়নি। অন্যদিকে হুয়ায় একজন ইহুদি হলেও সাবাথের নিয়ম ভাঙতে চেয়েছিল শুধু নবিজির (সা) প্রতি তার শত্রুতা ও ঘৃণার কারণে। আৰু সুফিয়ানের রাগ দেখে সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই সে বনু কুরায়জার দুর্গ থেকে কুরাইশদের শিবিরে আর ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ডেকে আনে। কারণ মুসলিমরা যখন বনু কুরায়জার দুর্গ ঘিরে ফেলে, ঠিক সেই সময়ে সে-ও ওই দুর্গের ভেতরেই ছিল (পরের পর্বে আমরা এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করব)।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment