যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪, আল-ওয়াকিদির লেখা ‘কিতাব আল-তারিখ ওয়া আল-মাগাজি’ গ্রন্থে নুয়ায়েম ইবনে মাসউদের জবানিতে উল্লিখিত আছে, খন্দকের যুদ্ধের প্রথম দিকের কোনো এক সন্ধ্যায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এই একটি গ্রন্থেই নুয়ায়েমের জবানিতে ঘটনার বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, বনু কুরায়জার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল।

তিনি তাদের সঙ্গে বসে মদ পান করতেন, রাতের খাবার খেতেন এবং তাদের কাছ থেকে খেজুর কিনে তা গাতাফানে নিয়ে যেতেন। তারপর তিনি বলেছেন, “খন্দকের যুদ্ধের জন্য আমরা যখন শিবিরে এসেছি, আল্লাহ তখন আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দেন। এটা কীভাবে হয়েছিল সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না।”

যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আল্লাহ হঠাৎ করেই তাঁর অন্তরে ইমানকে জাগিয়ে তোলেন। তখনই তিনি নবিজির (সা) কাছে যান; তাঁকে নামাজরত দেখে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। নামাজ শেষ হলে নবিজি (সা) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “হে নুয়ায়েম, তুমি এখানে কেন এসেছ?” আশ্চর্যজনক যে, সেখানে থাকা ১০ হাজার লোকের মধ্যে এই একজন গাতাফানি কুরাইশদের নেতা আবু সুফিয়ানকে চেনেন, বনু কুরায়জার নেতা কার ইবনে আসাদকে চেনেন এবং নবিজির (সা) সঙ্গেও তাঁর পরিচয় আছে।

আবার সেই মুহূর্তে তিনি ইসলামও গ্রহণ করেছেন। নবিজির (সা) সঙ্গে সেই সময়ে তাঁর কথোপকথন, তাঁর কাছ থেকে কৌশল ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া পরে সেই কৌশল অবলম্বন করে তিন দলের (কুরাইশ, বনু কুরায়জা ও পাতাফান) নেতাদের কাছে যাওয়ার বিষয়ে আমরা আগের পর্বে আলোচনা করেছি।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বনু কুরায়জার দূত সামুয়েল আজ্জাল ইবনে সামুয়েলকে খালি হাতে ফেরত পাঠানোর পর আবু সুফিয়ান আর দেরি না করে নুয়ায়েমের কাছে যা যা শুনেছে তার সবই কুরাইশদের জানিয়ে দেয়। তারপর সে নিজের সিদ্ধান্ত জানায়, “আমরা তাদের কাছে কাউকে হস্তান্তর করব না।”

পরের দিন নুয়ায়েম আবার বনু কুরায়জার কাছে গিয়ে বললেন, “তোমাদের পাঠানো দূত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবু সুফিয়ান কী বলেছে, তা কি তোমরা জান? সে বলেছে, ‘আল্লাহর কসম, আমরা তাদের কাছে ৭০ জন লোক তো দূরে থাক, একটি বাচ্চা উটও দেব না। আমরা কীভাবে এটা বিশ্বাস করব যে, এই ৭০ জনকে নিয়ে হত্যা করার পর মুহাম্মদের হাতে তুলে দেবে না?” সম্ভবত আৰু সুফিয়ান আসলেই এই কথাটি নুয়ায়েমকে বলেছিল, কারণ তার মনে তখন বনু কুরায়জার প্রতি সন্দেহ ঢুকে গেছে। আল্লাহ ভালো জানেন ।

বনু কুরায়জার তখনকার মানসিক অবস্থাটি কল্পনা করুন। কুরাইশদের জন্য এত কিছু করার পরেও এখন তাদের বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হচ্ছে। কাব ইবনে আসাদ অনুমান করতে পারছিল যে, পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু করেছে। তাই সে বলল, “আমার নিজেকেই এখন ধিক্কার দিতে মন চাইছে! আমি জানতাম এরকম ঘটবে। আল্লাহর কসম, হুয়ায় ইবনে আখতাব দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।”

 

যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, আল-জুবায়ের ইবন বাত্তা নামে বনু কুরায়জার আরেক নেতা তখন বলে, “যদি কুরাইশ ও পাতাফান চলে যায়, তাহলে আমাদের জন্য তরবারি (অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড) ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তারা কেন তাদের ৭০ জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে? তারা সংখ্যায় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণও বেশি। তা ছাড়া তাদের যে কোনো সময় পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। অথচ আমাদের এখানে থেকে যেতে হবে।” বনু কুরায়জা পুরোপুরি বুঝতে পারছিল যে কৃতকর্মের (বিশ্বাসঘাতকতার) জন্য শাস্তি তাদের প্রাপ্য; আমরা দেখব যে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment