যুদ্ধের জন্য মুসলিমদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১, যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নবিজি (সা) মুসলিমদের তিনটি প্রধান দলে ভাগ করেন:
১. মুসআব ইবনে উমায়েরের নেতৃত্বে মুহাজিরদের দল:
২. উসায়েদ ইবনে হুদায়েরের নেতৃত্বে আউসদের দল; ৩. আল-হুবাব ইবনুল মুন্দিরের নেতৃত্বে খাজরাজদের দল।
তাঁদের কাছে শুধু অল্প কিছু সংখ্যক ঘোড়া আর ১০০টির মতো বর্ম ছিল। সেদিন শুক্রবার পরামর্শমূলক সভা শেষে বিকেলের দিকে তাঁরা সেগুলো নিয়েই ওহুদ পর্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

Table of Contents
যুদ্ধের জন্য মুসলিমদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ওহুদ পর্বত এবং এর বরকত
ওহুদের পাহাড় শুধু একটি মাত্র পাহাড় নয়; অনেক পাহাড় মিলিয়ে এক পর্বতমালা যা এক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
এখনকার দিনে মসজিদুন নববি থেকে ওহুদে পৌঁছুতে গাড়িতে করে যেতে দশ মিনিটেরও কম সময় লাগে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মদিনা শহর বড় হতে হতে এখন ওহুদ পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু নবিজির (সা) সময়ে শহরটি ছিল খুবই ছোট, আর তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মসজিদুন নববি। এমনকি ‘জান্নাতুল বাকি’ও তখন ছিল সেই ছোট্ট মদিনা শহরের বাইরে।
ওহুদ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে:
ক. নবি করিম (সা) বলেছেন, “ওহুদ হলো জান্নাতের পর্বত।” কিছু পণ্ডিত এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেছেন, ওহুদ ছিল নবিজির (সা) অতিপ্রিয় একটি পর্বতমালা। কেউ কেউ বলেছেন, ওহুদকে জান্নাতে স্থানান্তরিত করা হবে । খ. সহিহ বুখারির একটি হাদিস অনুসারে, নবিজি (সা) একবার একটি অভিযান থেকে ফিরে এসে প্রথমেই ওহুদ পর্বতমালা দেখে বলেছিলেন, “ওহুদ এমন পর্বত যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও ওহুদকে ভালোবাসি।”
সুতরাং বলা যায়, ওহুদকে ভালোবাসা ইমানের একটি লক্ষণ। গ. সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা) একদিন আবু বকর (রা), উমর (রা) এবং উসমানকে (রা) সঙ্গে নিয়ে ওহুদে উঠলে পর্বতটি কাঁপতে শুরু করে । তখন নবিজি (সা) তাঁর পা দিয়ে পর্বতটির গায়ে মৃদু আঘাত করে বললেন, “শান্ত হও, ওহুদ! সত্যিই তোমার উপর এখন একজন নবি, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহিদ রয়েছেন।”
ভৌগোলিকভাবে ওহুদ হারামের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। সহিহ বুখারি অনুসারে, মদিনার হারামের সীমানা উত্তর ও দক্ষিণে দুটি পর্বত যথাক্রমে সাওর ও আয়ের এবং পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি আগ্নেয় ভূমির মাঝে বিস্তৃত। নবিজি (সা) যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে কেন ওহুদকে বেছে নিয়েছিলেন? এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, শত্রুপক্ষকে মোকাবেলা করার জন্য নবিজি (সা) কেন ওহুদকে বেছে নিয়েছিলেন? মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে মনস্থির করার পর শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গাটি খুঁজে বের করার প্রয়োজন ছিল ।

নবিজির (সা) সামনে দুটি বিকল্প ছিল:
১. শত্রুপক্ষকে খোলা ময়দানে মোকাবেলা করা (যা চরম বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারত, কারণ মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মুশরিকদের চার ভাগের এক ভাগ); অথবা
২. এমন কোনো সীমাবদ্ধ এলাকায় তাদের মোকাবেলা করা যা মুশরিকদের চেয়ে মুসলিমরা ভালো করে চিনতেন।
ওহুদে গিয়ে নবিজি (সা) ৩,০০০ জনের একটি বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে ৭০০-১০০০ জনের একটি ক্ষুদ্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু কীভাবে? সেখানে ছিল সরু করিডরের মতো একটি এলাকা যা ছিল তিন দিক থেকে সুরক্ষিত। করিডরের দুই দিকে ওহুদ পর্বতমালা, এক দিকে ‘জাবাল আল-রুমা নামের একটি ছোট পাহাড়, আর এক দিক খোলা। ওহুদ পর্বতমালার কারণে দুই দিক থেকে কেউ আসতে পারবে না। জাবাল আল-রুমার উপরে নবিজি (সা) ৫০ জন তিরন্দাজকে মোতায়েন করেন, ফলে তৃতীয় পথটিও তিনি বন্ধ করতে পেরেছিলেন। চতুর্থ দিকের একটি সরু পথ খোলা ছিল, যেটি দিয়ে কুরাইশদের ঢুকতে পারা সম্ভব ছিল।

এখন মুসলিম বাহিনীকে কেবল এই একটি খোলা দিকের ওপরই নজর দিতে হবে। এভাবেই নবিজি (সা) একটি বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ছোট বাহিনীকে অনেক বেশি কার্যকর করে তোলার পরিকল্পনা করেন। ওহুদের এই ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণেই তিনি এই স্থানটি বেছে নিয়েছিলেন।
ভাবতে অবাক লাগে, নবিজির (সা) কোনো সামরিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তায় এমন একটি কার্যকর পরিকল্পনা করেছিলেন। নবিজি (সা) মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে প্রথমে ওহুদে যাওয়ার কারণে কুরাইশরাও বুঝে যায় যে তাদেরও যুদ্ধ করতে সেখানে যেতে হবে। নবিজির (সা) ওহুদ অভিমুখে যাত্রার দিনটি ছিল শুক্রবার, হিজরতের ৩য় বছরের শাওয়াল মাসের ১৪ তারিখ ।
আরও পড়ুনঃ
