বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আলোচনা | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আলোচনা | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা, ১. মুসলিমদের প্রথম মোকাবিলা করতে হয়েছিল মদিনায় ইহুদি উপজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজাতি বনু কায়নুকাকে। তাদের ওপর দেওয়া শাস্তি অন্য দুই উপজাতিকে দেওয়া শান্তির তুলনায় সবচেয়ে কম। আমরা পরে দেখব, দ্বিতীয় উপজাতিটিকে ওহুদের যুদ্ধের পরে শাস্তি পেতে হয়েছিল, যা আরও কঠোর ছিল; এবং আহজাবের যুদ্ধের পরে তৃতীয় উপজাতির শাস্তি ছিল কঠোরতম (তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল)।

বিষয়টি যৌক্তিক। পরে আমরা দেখতে পাৰ, দ্বিতীয় দলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে: “দেখো, তোমরা (দ্বিতীয় উপজাতির লোকেরা) তো আগেই দেখেছ তোমাদের আগে প্রথম (এবং সবচেয়ে বড়) উপজাতির লোকেদের ভাগ্যে কী হয়েছিল। তারপরেও কীভাবে তোমরা আবার একই কাজ করলে?” তারপর তৃতীয় উপজাতিটিও দেখেছিল প্রথম ও দ্বিতীয় উপজাতির কী পরিণতি হয়েছিল, তবু তারা প্রকাশ্যে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস দেখিয়েছিল। ২. ইসলাম-বিদ্বেষীরা একটি আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ পড়ে তার অর্থ যথাযথভাবে না বুঝেই বলে, “দেখুন, কোরান বলে, ‘ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো না।” আরবিতে ‘আউলিয়া’ অর্থ কিন্তু ‘বন্ধু’ নয়। ওহিটি কী প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে তা-ও দেখুন। এখানে সেইসব লোকের ব্যাপারে বলা হয়েছে যারা আল্লাহ ও তার রসুলকে (সা) উপহাস করেছে; সুতরাং আল্লাহ বলছেন, ‘এই ধরনের লোকদের তোমার আউলিয়া হিসেবে গ্রহণ করো না।’

 

বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আলোচনা | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আলোচনা | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

৩. আয়েশা (রা) বলতেন, “নবিজি (সা) কখনই ব্যক্তিগত কোনো কারণে কারও ওপর প্রতিশোধ নেননি।” এর প্রমাণ আমরা পাই যখন দেখি যে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁর সঙ্গে অনেকবার অশোভন আচরণ করলেও তিনি তার ওপর একবারের জন্যও আঙুল পর্যন্ত তোলেননি। বরং সে যা চেয়েছিল তাই-ই তিনি তাকে দিয়েছেন ।

বনু কায়নুকার ক্ষেত্রে নবিজি (সা) কি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের উপর্যুপরি পীড়াপীড়িতে নিজের মত পরিবর্তন করেছিলেন? এর উত্তর কেউ জানে না । উবাই তিন-চারবার চেষ্টা করার পর নবিজি (সা) বলেছিলেন, “আমি তাদের তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।” নবিজি (সা) হয়তো আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে খুশি করার জন্য এটি করেছিলেন, অথবা তিনি সম্ভবত আগে থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন, অথবা এমনও হতে পারে যে তিনি সত্যিই মত পরিবর্তন করেছিলেন।

যা-ই হোক না কেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যা চেয়েছে তা প্রকাশ্যে মেনে নেওয়ার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট প্রজ্ঞা রয়েছে। কারণ তখনও হিজরির দ্বিতীয় সাল; নবিজির (সা) মদিনায় আগমনের পর মাত্র এক বছর তিন মাস পার হয়েছে। তখনও আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ব্যাপারে আশা ছিল যে, সে নিজেকে শুধরে নিয়ে প্রকৃত মুসলিম হয়ে উঠতে পারে। ইসলাম-পূর্ব মদিনায় আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তখনও অনেক আনসার তাকে সমীহ করতেন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৪. মুনাফেকদের আসল রূপ ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে, যদিও এখন পর্যন্ত তাদের মুনাফেক বলা শুরু হয়নি। বদরের যুদ্ধের পরে দ্বিতীয় হিজরিতেই মুনাফেকি শুরু হয়। তবে তাদের খোলস পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে যখন ওহুদের সময় (৩য় হিজরিতে) তারা যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে। এ বিষয়ে আমরা পরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

 

বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আলোচনা | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

৫. আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল যখন নবি করিমের (সা) সঙ্গে অশোভন ও রূঢ় আচরণ করেছিল তখন উমর (রা) ও অন্যান্য সাহাবি কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তার বিবরণ সিরাহের বইগুলোতে নেই। তবে অনুমান করা যায়, সাহাবিরাও আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মতো জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির এমন আচরণে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় তাঁদের কী করণীয় তা সম্ভবত তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment