বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা | বদরের যুদ্ধ-৭, জিব্রাইল (আ) নিজে নেমে এসে নবি করিমকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনি বদরের যুদ্ধে অংশ নেওয়া লোকদের কীভাবে মূল্যায়ন করেন?” নবিজি (সা) উত্তরে বলেন, “আমরা তাদের বিবেচনা করি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা হিসেবে।” জিব্রাইল (আ) বলেন, “আমরাও বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ফেরেশতাদের আমাদের মধ্যে সেরা হিসেবে দেখি।”

বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা | বদরের যুদ্ধ-৭ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইমাম বুখারি বদরের যুদ্ধের মুসলিমদের মর্যাদা বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লিখেছেন। সহিহ বুখারির একটি হাদিসে হারিসা ইবনে সুরাকা নামের এক সাহাবির ঘটনা আছে। হারিসা ছিলেন বদরের যুদ্ধের প্রথম শহিদদের অন্যতম। তিনি হঠাৎ কোথা থেকে আসা এক তিরের আঘাতে নিহত হন। হারিসার মা নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমাকে আমার পুত্রের কথা বলুন। সে কি জান্নাতে আছে?” উত্তরে নবিজি (সা) বলেন, “হে আমার খালা, তিনি শুধু একটি নয়, অনেকগুলো জান্নাতে আছেন। তিনি আছেন আল-ফিরদাউস আল-আলাতে।”
বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের (বদরিদের) মর্যাদা বোঝানোর জন্য হাতিব ইবনে আবি বালতার (রা) ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য। ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে হাতিব এক নারীর মাধ্যমে কুরাইশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মুসলিমদের আগমনের খবর ফাঁস করে দেন। নবিজির (সা) পরিকল্পনা ছিল, মক্কার কুরাইশদের হতচকিত করে হঠাৎ অভিযান চালানো হবে। এখন এই অভিযানের খবর ফাঁস হয়ে গেলে তো পুরো পরিকল্পনাই ভণ্ডুল হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জিব্রাইল (আ) নবিজিকে (সা) জানিয়ে দিয়েছেন, “অমুক নারীর কাছে একটি চিঠি আছে, যাতে আপনার যুদ্ধ-পরিকল্পনার কথা কুরাইশদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই নারীকে খুঁজে বের করুন।” নবিজির নির্দেশে আলি ও আব্বাস তলোয়ার নিয়ে ওই নারীকে খুঁজতে বেরিয়ে যান এবং নারীর চুলের মধ্যে চিঠিটি খুঁজে পান। তাতে লেখা ছিল, “হাতিব ইবনে আবি বালতা থেকে কুরাইশদের প্রতি। সাবধান হয়ে যাও । মুসলিমরা আসছে।”

হাতিবের এই বিশ্বাসঘাতকতায় উমর (রা) ক্ষেপে গিয়ে নবিজিকে (সা) বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমাকে নির্দেশ দিন, আমি তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করব!” নবিজি (সা) বলেন, “হে হাতিব, তুমি কেন এমন করলে?” হাতিব জবাব দেন, “হে আল্লাহর রসুল, ইসলামের চেয়ে কুফরকে আমি কোনোভাবেই বেশি ভালোবাসতে পারি না। আপনাদের সবার তো সম্মান ও সুরক্ষা আছে। কিন্তু আমি তো তেমন কেউ নই। আমার পরিবার ও সবকিছু এখনও মক্কায়। আমি জানি আল্লাহ আপনাদের রক্ষা করবেন। কিন্তু এই চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে আমি আশা করেছিলাম যে, তারা (কুরাইশরা) আমার পরিবারকে রেহাই দেবে।”

অর্থাৎ হাতিব তাঁর পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল এই ভেবে যে, মুসলিমদের আগমনের খবর পেয়ে কুরাইশরা তাঁর পরিবারের মানুষকে হত্যা করতে পারে। তিনি ধারণা করেছিলেন, খবর দিয়ে সাহায্য করার কারণে কুরাইশরা তাঁর প্রতি অনুগ্রহ দেখাতে পারে। নবিজি (রা) উমরকে বললেন, “হাতিব সত্য কথা বলছে।” উমর আবার বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমাকে তার গর্দান কেটে ফেলার অনুমতি দিন।”
নবিজি (সা) তাঁকে তিরস্কারের সুরে বললেন, “হে উমর, তুমি কীভাবে সবকিছু জানবে? আল্লাহ সম্ভবত তাঁর বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের পছন্দ মতো কাজ করো, কারণ তোমাদের ক্ষমা করা হয়েছে।” অন্য কথায়, হাতিবের জীবন রক্ষার জন্য নবিজি (সা) বদরিদের মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছিলেন। বদরের যুদ্ধ অংশগ্রহণকারী সাহাবিরা অন্য সাহাবিদের চেয়ে উচ্চতর মর্যাদার এবং অভিজাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এ কারণেই ইবনে ইসহাক, ইবনে হিশাম, ইবনে কাসির প্রমুখ পণ্ডিত-গবেষক সেই সাহাবিদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করেছেন।
আরও পড়ুনঃ
