বদরের যুদ্ধের দিন ইবলিসের অবস্থা | বদরের যুদ্ধ-৫, আমরা ৩৭তম পর্বে আলোচনা করেছি, কুরাইশরা যুদ্ধযাত্রা থেকে যখন ফিরে আসার উপক্রম করেছিল তখন ইবলিস তাদের কাছে সুরাকা ইবনে মালিকের রূপ ধরে হাজির হয়ে এই আশ্বাস দিয়েছিল যে তাদের ওপর কেউ আক্রমণ করতে আসবে না। সেই সাথে সে এই আশ্বাসও দিয়েছিল, “আমিও তোমাদের সাথে থাকব যাতে তোমরা নিশ্চিত হতে পার যে, যদি কিছু ঘটে তাহলে তোমরা আমাকে হত্যা করতে পারবে।”

বদরের যুদ্ধের দিন ইবলিসের অবস্থা | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
কিন্তু বাস্তবে কী হলো? যখন মুসলিম ও মুশরিক বাহিনী পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল এবং শয়তান দেখতে পেল যে ফেরেশতারাও মুসলিমদের সাহায্য করতে নেমে এসেছেন, তখন সে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মুশরিকদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে উল্টোদিকে রওনা দিল। তাকে চলে যেতে দেখে আল হারিস ইবনে হিশাম জিজ্ঞেস করল, “ও সুরাকা, তুমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছ?” এ কথা শুনে শয়তান যাওয়ার সময় তাকে এত জোরে ধাক্কা দিয়েছিল যে আল-হারিস ছিটকে দূরে পড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাটিই আল্লাহ তায়ালা কোরানে উল্লেখ করেছেন:

“স্মরণ করো, শয়তান তাদের কাজকর্ম তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল ও বলেছিল, ‘আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হবে না, সাহায্য করার জন্য আমি তোমাদের কাছে থাকব।’ তারপর দুই দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে সরে পড়ল ও বলল, ‘তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক রইল না, তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। আমি আল্লাহকে ভয় করি, আর আল্লাহ তো শাস্তিদানে কঠোর।” [সুরা আনফাল, ৮:৪৮]
ইমাম মালিক রচিত মুয়াত্তায় বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা) বলেছেন, “ইবলিস বদরের যুদ্ধের দিনে যতটা অপমানিত হয়েছে এর চেয়ে বেশি অপমানিত সে আর কখনও হয়নি।” কারণ, শয়তান সেদিন মুসলিমদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের নমুনা সরাসরি দেখতে পেয়েছিল। সে আরও দেখেছিল, জিব্রাইল (আ) অন্য ফেরেশতাদের উৎসাহ দিয়ে বলছেন, “সামনে এগিয়ে যাও।” সুতরাং সেদিন বদরের যুদ্ধে ইবলিস জীবনে প্রথমবারের মতো নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করে। লক্ষ করুন, ইবলিস এক্ষেত্রে নিজেই কাজে নেমে পড়েছিল। খুব বেশি বাজে ধরনের কাজ ছাড়া সচরাচর সে নিজে সরাসরি জড়িত হয় না। তার সশরীরে বদরে হাজির হওয়া থেকেই বোঝা যায়, বদরের যুদ্ধে সে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিল, এই যুদ্ধ তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চলুন এবার যুদ্ধক্ষেত্রে দুই দলের দিকে একটু লক্ষ করি। একদিকে আছে আদমকে সেজদা করতে অস্বীকারকারী শয়তানের শিরোমনি ইবলিস; আর তার সাথে আছে আবু জেহেল, উকবা, উমাইয়া, উতবা প্রমুখ দুষ্টচক্র। অন্যদিকে ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যেই আছেন ফেরেশতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম জিব্রাইল (আ); আর তাঁর সাথেই আছেন মহানবি মুহাম্মদ (সা), আবু বকর, উমর, আলি প্রমুখ সাহাবি।
এই দুই পক্ষের মধ্যে আসলে পার্থক্য কী? পার্থক্যটি হলো, সত্য বনাম মিথ্যার, সঠিক বনাম ভুলের, জিব্রাইল বনাম ইবলিসের, এবং মুহাম্মদ (সা) বনাম আবু জেহেলের। সত্যিই এ দিনটি ছিল ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ (সিদ্ধান্ত/পার্থক্য করার দিন) (৮:৪১]। আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পর থেকে কেয়ামত অবধি বদরের যুদ্ধের মতো পার্থক্য সৃষ্টিকারী যুদ্ধ কখনও হয়নি, আর হবেও না। এ কারণেই বলা হয়, বদরের যুদ্ধ আল্লাহর পক্ষ থেকে নবিজিকে (সা) দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক বিজয়।
আরও পড়ুনঃ
