বদরের যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বদরের যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৪, মুসলিম বাহিনী এগিয়ে যাওয়া শুরু করলে নবি করিম (সা) বললেন, “মুশরিকরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে না আসা পর্যন্ত (যে দূরত্ব থেকে মুশরিকদের ছোড়া তির এসে পৌঁছতে পারে) তোমরা তির ছুড়বে না। আর তারা যখন কাছাকাছি চলে আসবে, তখন তাদের দিকে একসঙ্গে অনেক তির ছুড়বে। কিন্তু কিছু ভির পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্যও রেখে দেবে।” আবু দাউদে বর্ণিত একটি হাদিস অনুসারে নবিজি (সা) বলেন, “যতক্ষণ না মুশরিকরা তোমাদের খুব কাছাকাছি চলে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের তলোয়ারগুলো খাপ থেকে বের করো না।”

 

বদরের যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বদরের যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ঠিক সেই সময়ে, অথবা তার কিছুটা সময় পরে, নবিজি (সা) একটু নিচু হয়ে মাটি থেকে কয়েকটা নুড়িপাথর কুড়িয়ে নিয়ে কুরাইশদের দিকে ছুড়ে মেরে বললেন, “এই মুখগুলো অভিশপ্ত হোক। এই মুখগুলো অভিশপ্ত হোক। এই মুখগুলো অভিশপ্ত হোক।” জানা যায়, মুশরিকরা এই ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য চোখে কিছু দেখতে পায়নি। তাদের মনে হয়েছিল, তাদের চোখের উপর কিছু একটা পড়েছে। অনুমান করা যায়, মুশরিকরা যখন মুসলিমদের দিকে এগিয়ে আসছিল, তখনই এই ঘটনাটি ঘটেছিল।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এর উল্লেখ করেছেনআর তুমি যখন কাঁকর ছুড়েছিলে তখন তুমি ছোড়নি, আল্লাহই তা ছুড়েছিলেন, আর তা ছিল মুমিনদের উত্তম পুরস্কার দেওয়ার জন্য।” [সুরা আনফাল, ৮:১৭] কুরাইশ বাহিনীর দিকে নবিজি (সা) নুড়িপাথর ছুড়ে মারার পর পরই আসল যুদ্ধ শুরু হয়। নবি করিম (সা) কি বদরে নিজে সশরীরে লড়াই করেছিলেন? অধিকাংশ পণ্ডিতের মত অনুসারে, নবিজি (সা) বেশিরভাগ যুদ্ধেই সশরীরে লড়াই করেননি; কারণ তিনি ছিলেন “মিলিটারি কমান্ডার’ (সেনাবাহিনীর নেতা), যার মূল দায়িত্ব ছিল যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু বদরের যুদ্ধে তিনি সরাসরি শারীরিকভাবে অংশ নেন। ইবনে হাজারের মতে, বদরে নবিজি (সা) যুদ্ধ করেছেন, কিছু সময়ের জন্য তাঁবুতে গিয়েছেন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য, ফিরে এসে আবার লড়াই চালিয়ে গেছেন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ছিলেন মুসনাদ ইমাম আহমদের বর্ণনা অনুসারে, আলি (রা) বলেন, “বদরের যুদ্ধে নবি করিম (সা) আমাদের সবার চেয়ে শত্রুর বেশি নিকটবর্তী অবস্থানে যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করলে আমরা তাঁর কাছাকাছি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। যুদ্ধের ময়দানে তিনি ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ও সাহসী।” আলি আরও বর্ণনা করেছেন, নবিজি (সা) কী করছেন তা দেখার জন্য তিনি একবার তাঁবুর ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি তাঁকে সেখানে সেজদারত অবস্থায় দেখতে পান এবং বলতে শোনেন, “ইয়া হায়্যু, ইয়া কায়্যুম’ (১)।

তারপর আলি (রা) লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে এলেন, আরও কিছু সময় পরে তাঁবুতে গিয়ে দেখলেন, নবিজি (সা) তখনও সেজদাতেই পড়ে রয়েছেন। এভাবে আলি (রা) তৃতীয়বারের মতো গিয়ে ফিরে এসেও নবিজিকে (সা) সেজদারত অবস্থায় দেখতে পান। এক সময় যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ায় আলিকে (রা) আর চতুর্থবারের মতো তাঁবুতে আর ফিরে যেতে হয়নি।

 

বদরের যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আমরা এখানে আলির (রা) মুখ থেকে দুটি বিষয় জানতে পারি: (১) নবিজি (সা) তাঁবুতে সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন, এবং (২) তিনি যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম বাহিনীর একদম সম্মুখভাগে ছিলেন। এ দুটি বিষয় সমন্বয় করতে চাইলে বলা যেতে পারে, কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা বদরের যুদ্ধে নবিজি (সা) লড়াই ও প্রার্থনা দুটিই পর্যায়ক্রমে চালিয়ে গিয়েছিলেন। ইবনে কাসির ও ইবনে হাজারের মতে, আবু বকর (রা) পুরো যুদ্ধের সময়ে নবিজির (সা) সঙ্গেই ছিলেন, এমনকি তাঁবুর ভেতরে দোয়া করার সময়ও তিনি প্রহরী হিসেবে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment