নবিজির সা প্রার্থনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪, সহিহ বুখারি, মুসনাদ ইমাম আহমদ এবং অন্যান্য হাদিসগ্রন্থ থেকে আমরা জানি যে, নবিজি (সা) আহজাবের বিরুদ্ধে দোয়া করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। আহজাবের রাতে নবিজি (সা) আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেন তা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে এভাবে বর্ণিত আছে: “হে আল্লাহ, যিনি এই কিতাব নাজিল করেছেন, যিনি প্রতিশোধ গ্রহণে তৎপর! হে আল্লাহ, আহজাবকে ধ্বংস করুন। হে আল্লাহ, তাদের পায়ের তলার মাটিকে নাড়িয়ে দিন।”
নবিজির সা প্রার্থনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

অন্য একটি হাদিসে আছে, এই ঘটনার ৩০ বছর পরে আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা নামের এক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, “কোনো এক যুদ্ধে নবিজি (সা) সবাইকে বলেছিলেন, ‘তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা রেখো না। তবে যদি লড়াই করতে বাধ্য হও, তবে ধৈর্য ধরো এবং জেনে রেখো যে তোমার তলোয়ারের ছায়ায়ই রয়েছে জান্নাত।’ তারপর তিনি এই দোয়াটি করেন, ‘হে আল্লাহ, যিনি এই কিতাবকে নাজিল করেছেন, যিনি মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, এবং যিনি আহজাবকে ধ্বংস করেন! তাদের ধ্বংস করুন, আর তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।”
আমরা অন্য উৎস থেকে জানতে পারি, যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, সেটি ছিল আহজাবের যুদ্ধ। লক্ষ করুন, নবিজি (সা) তাঁর দোয়ায় আল্লাহকে ‘মেঘমালা সঞ্চালনকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আমরা দেখতে পেলাম আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবিকে (সা) কীভাবে বাতাস ও মেঘ পাঠিয়ে সাহায্য করলেন, যা তিনি কোরানের আয়াতে (৩৩:৯) উল্লেখ করেছেন। ইবনে ইসহাক ও অন্যান্য সিরাহ গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, গাতাফান ও কুরাইশদের সবকিছু ছেড়েই পালিয়ে যেতে হয়েছিল। নবিজি (সা) বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে ‘সাবার ঝোড়োবাতাস’ দ্বারা সাহায্য করেছেন, যেমনটি ‘ডাবুরের ঝোড়োবাতাস’ দ্বারা আদ জাতি ধ্বংস হয়েছিল।”

এই হাদিসে উল্লিখিত ‘সাবা’ এবং ‘ডাবুর’ কী? ইবনে হাজারের বর্ণনা অনুসারে সারা পূর্ব দিক থেকে আসা সেই সুন্দর বাতাস যা ইউসুফের (রা) সুবাস ইয়াকুবের (রা) কাছে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, পশ্চিম দিক থেকে আসা ডাবুর সাবার চেয়ে প্রখর এবং দুর্বিনীত। আল্লাহ জানেন, নবিজি (সা) সবাইকে ইসলামের পথে আনতে চান। তাই তিনি তাদের জন্য সাবা পাঠিয়েছিলেন, ডাবুর নয়। এ কারণেই কুরাইশরা ছেড়ে চলে গেলেও বাতাস তাদের কোনো ক্ষতি করেনি। সাবা আহজাবের কারও প্রাণহানি ঘটায়নি। আমরা সিরাহের পরবর্তী বছরগুলোতে দেখতে পাব, কুরাইশ ও গাতাফানসহ আহজাবের অন্য গোত্রগুলোর বেশিরভাগই ইসলামের পথে চালিত হয়েছিল। আল্লাহ যদি তখন ডাবুর পাঠাতেন তবে তারা ইসলামের পথে ফিরে আসার কোনো সুযোগই পেত না ।
যুদ্ধের ফলাফল

কুরাইশরা আহজাবের যুদ্ধে এসে কিছু না পেয়ে একেবারে খালি হাতে ফিরে গেল। আরবের ইতিহাসে তারা আগে কখনও এমনভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হয়নি। ১০ হাজার লোকের শক্তিশালী বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তারা মুসলিমদের পরাজিত করতে পারেনি। বড় ধরনের রক্তপাত দূরের কথা, কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তারা এমনকি ১০ জন মানুষকেও হত্যা করতে পারেনি। পুরো অভিযানে তারা শুধু ক্ষতিরই শিকার হয়েছিল।
আহজাবের যুদ্ধের পরে তারা আর কখনও মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার সুযোগ পায়নি। নবিজি (সা) তখন বলেছিলেন, যা মুসনাদ ইমাম আহমদে বর্ণিত আছে, “এখন থেকে আমরা আক্রমণ করব। তারা আর আমাদের আক্রমণ করতে পারবে না।” অর্থাৎ জোয়ার এখন থেকে উল্টোদিকে বইতে শুরু করবে।
আরও পড়ুনঃ
