নবিজিকে হত্যার চেষ্টা | বনু নাদিরের বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজিকে হত্যার চেষ্টা | বনু নাদিরের বহিষ্কার, বনু নাদিরের লোকেরা মূলত কৃষিকাজে জড়িত ছিল। তারা মদিনার দক্ষিণে বসবাস করত। তাদের ছিল বিশাল বিশাল খেজুর বাগান; সেইসব বাগানের মধ্যে দুর্গ বানিয়ে তারা থাকত। প্রতিটি ছোট ছোট গোত্রেরও ছিল নিজস্ব দুর্গ।

নবিজিকে হত্যার চেষ্টা | বনু নাদিরের বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজিকে হত্যার চেষ্টা | বনু নাদিরের বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

রক্তমূল্য পরিশোধে অংশ নেওয়ার জন্য নবিজির (সা) অনুরোধকে বনু নাদিরের নেতারা সানন্দেই স্বাগত জানাল। তাদের একজন নেতা তো বলেই ফেলল, “ভালোই হয়েছে যে আপনারা সাহায্যের জন্য আমাদের কাছে এসেছেন।” তারা নবিজি (সা) ও সাহাবিদের দুর্গের বাইরে রেখে এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দুর্গের ভেতরে গেল। একজন বলল, “আমাদের সামনে সবচেয়ে ভালো সুযোগ এসেছে। মুহাম্মদ এখন আমাদের দুর্গের ঠিক বাইরে বসে আছে। আমরা যদি তার উপর বড়সড় একটা পাথর ফেলতে পারি, তাহলে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, ইহুদিরা তাদের দুর্গগুলো রক্ষা করার জন্য দুর্গের ছাদে ভারী ভারী জিনিসপত্র, পাথর ইত্যাদি রেখে দিত। কিন্তু অন্য একজন বলল, “না, এটা করলে ওরা (মুসলিমরা) চুপ করে বসে থাকবে না।” তবে তর্কবিতর্ক শেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল, ছাদ থেকে নবিজি (সা) উপর পাথর ফেলা হবে। এতে তাদের বেশি সময় লাগল না, কারণ নবিজিকে (রা) হত্যা করার প্রস্তুতি তাদের মনে আগে থেকেই ছিল।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নবিজি (সা) বনু নাদিরের দুর্গের কাছে আসার পর মাত্র কয়েক মিনিট পেরিয়েছে, হঠাৎ তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং কাউকে কিছু না বলে সোজা মদিনা অভিমুখে রওনা হলেন । সাহাবিরা কিছুই বুঝতে পারলেন না; তাঁরা নবিজির (সা) ফেরার অপেক্ষায় বসে রইলেন। ওদিকে ইহুদিরাও তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ওত পেতে ছিল। কিন্তু নবিজি আর ফিরলেন না; সাহাবিরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মদিনায় ফিরে গেলেন। পরে নবিজি (সা) সাহাবিদের বলেন, সেই সময় জিব্রাইল (আ) তাঁর কাছে এসে বলেছিলেন, “এক্ষুনি উঠে দাড়ান এবং এখান থেকে চলে যান।” সে কারণেই তিনি হঠাৎ উঠে দাড়িয়ে কাউকে কিছু না বলে সেই স্থান ত্যাগ করেছিলেন।

আরেক বর্ণনা অনুসারে, বনু নাদিরের নেতারা নবিজিকে (সা) তাদের দুর্গের সামনে দেখে বলেছিল, “খুব ভালো হয়েছে যে আপনি এখানে এসেছেন। আমরা আপনার সম্মানে একটি বিশেষ ভোজের আয়োজন করতে চাই। একটু অপেক্ষা করুন। আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমাদের একটু সুযোগ দিন।” সেই যুগে মানুষ অনেক আগে থেকে বলে কয়ে কোথাও যেত না, সোজা গিয়ে হাজির হতো। নবিজি (সা) তেমনি সেদিন হঠাৎ করেই সেখানে গিয়েছিলেন। তাই তাঁর আপ্যায়নের জন্য বনু নাদিরের লোকদের কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। সে কারণে তারা বলেছিল, “একটু অপেক্ষা করুন, আপনাকে বসানোর ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের কিছুটা সময় দিন।”

 

নবিজিকে হত্যার চেষ্টা | বনু নাদিরের বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

অর্থাৎ নবিজিকে (সা) বাইরে অপেক্ষা করতে বলার মধ্যে অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক মনে হতে পারে এমন কিছু ছিল না। নবিজিকে (সা) হত্যার জন্য বনু নাদিরের এই চেষ্টার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এই আয়াতটি নাজিল করেন: “হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো। যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের ওপর হাত তুলতে (আক্রমণ করতে) চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তাদের হাত ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন (আক্রমণ থেকে বিরত রেখেছিলেন)।” [সুরা মায়েদা, ৫:১১] সুরা মায়েদা সম্ভবত এই ঘটনার চার বছর পরে নাজিল হয় ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment