যুদ্ধবন্দি: নবিজির (সা) চাচা আব্বাস | বদরের যুদ্ধ-৬, যে আনসারি আব্বাসকে বন্দি করেছিলেন, তিনি নবি করিমের (সা) কাছে এসে বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি আব্বাসকে আপনাকে উপহার হিসেবে দিতে চাই।” উত্তরে নবিজি (সা) তাঁকে বলেন, “না। বরং তাঁর মুক্তিপণের পরিমাণ একটি মুদ্রাও কম করো না।”
সেই আনসারি আব্বাসের মুক্তিপণ হিসেবে বেশ ভালো পরিমাণ মূল্য পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রায় ৪ হাজার দিরহাম। শুধু তা-ই নয়, নবিজি (সা) বলেছিলেন, আব্বাসের উচিত হবে আকিল ও নওফেলের জন্যও মুক্তিপণ দিয়ে দেওয়া, কারণ তারা দুজন তাঁর ভাতিজা। উল্লেখ্য, আকিল ছিল আবু তালিবের দ্বিতীয় পুত্র। আৰু তালিবের প্রথম পুত্র ছিল তালিব, তৃতীয় পুত্র জাফর এবং চতুর্থজন আলি। আর নওফেল ছিল আবদুল মুত্তালিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র হারিসের ঔরসজাত সন্তান ।

যুদ্ধবন্দি: নবিজির (সা) চাচা আব্বাস | বদরের যুদ্ধ-৬ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইমাম আহমাদের মুসনাদে বর্ণিত আছে, আব্বাস নবিজির (সা) কাছে এসে বলেছিলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি তো একজন মুসলিম। তার পরেও কেন তুমি আমার ওপর মুক্তিপণ ধার্য করছ?” নবিজি (সা) উত্তরে বলেন, “আল্লাহ আপনার অবস্থা জানেন (অর্থাৎ বাহ্যিক অবস্থার আলোকেই আপনাকে আমাদের বিচার করতে হবে)। আপনার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরও ভালো কিছু দেবেন। আপনি যেহেতু মুসলিমদের বিপক্ষে লড়াই করেছেন, সেহেতু আপনাকে অবশ্যই মুক্তিপণ দিতে হবে।”
পরবর্তী সময়ে আব্বাস বলেছিলেন, সুরা আনফালের ৭০ নম্বর আয়াতটি তার জন্যই নাজিল হয়েছিল, যাতে বর্ণিত আছে “হে নবি! তোমাদের হাতে ধৃত যুদ্ধবন্দিদের বলো, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন তবে তোমাদের কাছ থেকে যা নেওয়া হয়েছে তার চেয়ে ভালো কিছু তিনি তোমাদের দেবেন ও তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”

[৮:৭০] আব্বাস নবিজিকে (সা) বললেন: আমার কাছে তো কোনো টাকাপয়সা নেই।” নবিজি (সা): আপনার ও উন্মুল ফাদলের (আব্বাসের স্ত্রী) সে সব অর্থ কোথায় যা আপনারা অমুক দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন? এবং যা আপনি বাইরে গিয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন? এবং যার সম্পর্কে আপনি উচ্ছ্বল-ফাদলকে বলেছিলেন, ‘আমি যদি কখনও মারা যাই, তাহলে এই অংশটুকু আল-ফাদলের কাছে যাবে, এই অংশটুকু আবদুল্লাহর কাছে যাবে এবং এইটুকু কুসামকে দেওয়া হবে?”
আব্বাস (এটুকু শুনেই): “আমি তাঁর কসম খেয়ে বলছি, যিনি তোমাকে সত্য বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন, কোনো সন্দেহ নাই যে তুমিই আল্লাহর রসুল। কারণ, আমি ও আমার স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ এ বিষয়ে কিছুই জানে না।”
আব্বাস পরে এ সম্পর্কে বলেছেন, “আল্লাহর কসম, নবিজি (সা) আমার কাছ থেকে সেদিন যদি আরও বেশি কিছু নিতে চাইতেন তাহলে ভালো হতো। কারণ তিনি আমার থেকে যা নিয়েছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে যে ২০ উকিয়া (রুপা পরিমাপের একক) দিতে হয়েছিল তার পরিবর্তে এখন আমার ২০ জন দাস রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল। এই ব্যবসায়ীরা আমার অধীনে হওয়ায় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই আমি লভ্যাংশ পেয়ে থাকি।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আব্বাস একজন চালাক-চতুর ব্যবসায়ী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আব্বাস নিজের মুক্তিপণের সঙ্গে দুই ভাতিজা আকিল ও নওফেলের মুক্তিপণও পরিশোধ করেন।
যুদ্ধবন্দির মুক্তিপণ: শিশুদের লেখাপড়া শেখানো
ইমাম আহমদের মুসনাদে বর্ণিত একটি অথেনটিক হাদিসে উল্লেখ আছে, কিছু যুদ্ধবন্দির কাছে মুক্তিপণের অর্থ ছিল না, তবে তারা লেখাপড়া জানত। নবিজি (সা) তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তারা যদি আনসারি শিশুদের পড়তে এবং লিখতে শেখায়, তবে তারা মুক্তি পাবে।

