খ্রিষ্টধর্ম নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রাসঙ্গিক বিষয় | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন?, যখন যিশুখ্রিষ্টকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর অনুগামীরা একটি দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল, ‘কী হয়েছে? তিনি কোথায়?’ এবং মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যেই প্রশ্ন উঠল, “তিনি কে? তিনি কী ছিলেন?’ একটা দল, যারা যিশুখ্রিষ্টের সত্যিকারের শিষ্য ছিল (যেমন: বার্নাবাস ), তারা বলেছিল যে তিনি ছিলেন একজন নবি, মসিহ এবং মুসার (আ) বিধি-ব্যবস্থা পালনকারী একজন জ্ঞানী। ব্যক্তি। এই ক্ষেত্রে তাঁদের আর মুসলিমদের বিশ্বাস একই।

খ্রিষ্টধর্ম নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রাসঙ্গিক বিষয় | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
পরবর্তীকালে পল নামে আর এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যিনি খ্রিষ্টধর্মের ভিন্ন একটি ধারা প্রচলন করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, পলের সঙ্গে যিশুখ্রিষ্টের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি (যদিও তিনি যিশুখ্রিষ্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন)। পলের মতবাদ অনুসারে:
(ক) যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতে হবে।
(খ) যিশুখ্রিষ্ট মুসা (আ) ও ইব্রাহিমের (আ) প্রবর্তিত আইন বাতিল করতে এসেছিলেন। তার মানে, তাদের (খ্রিষ্টানদের) কোনো আইন মানতে হবে না। এ কারণেই খ্রিষ্টানদের আমাদের সময়ের কোনো আইন নেই, যদিও যিশুর খা করা হয়েছিল, তিনি শূকরের মাংস খাননি এবং একজন ইহুদির মতো জীবনযাপন করেছিলেন। যিশুখ্রিষ্টকে নিয়ে এই বিতর্ক পরবর্তী ৩০০ বছর ধরে অব্যাহত ছিল। তাদের মধ্যে একটি দল তাদের বিশ্বাসে অটল ছিল। আধুনিক যুগের স্কলাররা তাদের ‘ইহুদি-খ্রিষ্টান’ অথবা ‘মসিহ-ইহুদি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে যিশু একজন নবি ছিলেন।

আর একটি দল ছিল যাদের বলা হয় ‘পলিন খ্রিষ্টান’। তারা বিশ্বাস করত যে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনি বিদ্যমান আইন বাতিল করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। পরবর্তীকালে এই বিশ্বাসের সঙ্গে ট্রিনিটি এসে যুক্ত হয়েছিল, যদিও পল কখনো এটা প্রচার করেননি। আপনি ওল্ড টেস্টামেন্টে ট্রিনিটি খুঁজে পাবেন না; এমনকি নিউ টেস্টামেন্টেও খুব সহজে কোনো রেফারেন্স পাবেন না। পেলেও আপনি তা যিশুর ভাষায় পাবেন না।
যা-ই হোক, পরবর্তী ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে, রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন নাইসিয়া শহরে এক বিশাল কাউন্সিল ডেকে সেখানে খ্রিষ্টান বিশ্বের সব বিশপকে আমন্ত্রণ জানান। বিশপদের মধ্যে হরেক রকমের মত ছিল। কেউ বলেন ঈশ্বর একজন, কেউ বলেন ঈশ্বর তিনজন, আবার কেউ বা বলেন যিশু ঈশ্বরের পুত্র ইত্যাদি। কনস্ট্যান্টাইন এক আদেশ জারি করেন, যা ‘নাইসিন ধর্মমত (ক্রিড)’ নামে পরিচিত হয়। সেই আদেশ অনুসারে তখন থেকে পৃথিবীতে তিন ঈশ্বরের নিয়মই বলবত থাকবে। তবে এই তিন প্রকৃত তিন নয়, তারা এক। মূলত ৩=১ ।
ধর্মমতের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন আরিয়াস নামে এক ব্যক্তি। তিনি ট্রিনিটির ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। সভা শেষ হলে কনস্ট্যান্টাইন আরিয়ানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। আরিয়াস জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে যান। সম্ভবত তিনি দক্ষিণে আফ্রিকার দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আর, কনস্ট্যান্টাইনের পৃষ্ঠপোষকতায় নাইসিন ধর্মমত রোমান সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।

আমাদের সময়ে খ্রিষ্টধর্মের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে: ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট ও অর্থডক্স। সবই মূল নাইসিন ধর্মের শাখা। নাইসিন ধর্মমতের আগে খ্রিষ্টান ধর্মের যতগুলো শাখা ছিল তার সবই কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। অর্থাৎ আমাদের সময়ে খ্রিষ্টধর্মের এমন একটিও শাখা বিদ্যমান নেই, যা নাইসিন ধর্মমত প্রতিষ্ঠার আগে প্রচলিত ছিল। তবে হাদিসেও উল্লেখ আছে, সত্যিকারের খ্রিষ্টান ধর্ম কিছু কিছু এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ।
পরবর্তী একটি পর্বে সালমান আল-ফারিসির কাহিনিতে আমরা দেখব, সালমানের শিক্ষক বলেছিলেন, “আমি জানি না, অমুক ছাড়া আমার ধর্মমতের এমন কেউ আছে কি না। তুমি অমুকের কাছে যাও।” সালমান একজনের পর আরেকজনের কাছে যেতে থাকলেন। অবশেষে তাঁর শেষ শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি বলেন, “আমি জানি না খ্রিষ্টধর্মে আমাদের ধারার অনুসরণকারী কেউ আছে কি না।” খ্রিষ্টধর্মের সেই ধারাটিই ছিল সত্য ধর্ম, ইসলামের মূল বাণীর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
প্রচলিত আছে, নাজাশি খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে আরিয়াসের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ কারণেই যখন ইসলাম তাঁর কাছে এসেছিল, তখন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বলেছিলেন, “এটি যিশুর কাছ থেকেই এসেছে।” তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। আফ্রিকার ওই অঞ্চলে আরিয়াসের প্রভাব ছিল, সময়ের আবর্তে যার কিছু অবশেষ থেকে যায়। সম্ভবত নাজাশিও তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
আরো পড়ুনঃ
