নবিজির (সা) কাছে খবর পৌঁছে গেল | ওহুদের যুদ্ধ-১, নবিজির (সা) চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব সম্ভবত বদরের যুদ্ধের পর পরই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই যুদ্ধের পরে তিনি মুসলিম হিসেবে মক্কায় ফিরে যান। আরেকটি মত হলো, তিনি আগেই গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। স্মরণ করুন, তিনি বদরের যুদ্ধের পর বন্দি অবস্থায় বলেছিলেন, “তারা আমাকে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছিল। আমি কিন্তু যুদ্ধ করতে চাইনি । এবং যুদ্ধে আমি তেমন কিছুই করিনি।”

নবিজির (সা) কাছে খবর পৌঁছে গেল | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
একথা শুনে নবিজি (সা) বলেছিলেন, “সে সত্য বলছে। সে আসলে লড়াই করতে চায়নি।” যা-ই হোক, বদরের যুদ্ধের পর নবিজি (সা) তাঁকে একজন ‘সিক্রেট’ মুসলিম হিসেবে মক্কায় ফেরত পাঠান। তিনি ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। নিচে বর্ণিত ঘটনাটি এই ধারণা নিশ্চিত করে কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য রওনা দেওয়ার পরপরই আব্বাস নবিজিকে (সা) তাদের সেনাবাহিনীর আকার, ঘোড়া ও অস্ত্রের সংখ্যা ইত্যাদি বিস্তারিত জানানোর জন্য একজন বিশ্বস্ত ভৃত্যকে মদিনায় পাঠান।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তিনি খবর পাঠাতে এত দেরি করেছিলেন কেন? প্রথম কারণটি হতে পারে, কুরাইশরা হয়তো। আব্বাসকে বিশ্বাস করত না; তিনি তো আবু লাহাবের মতো নবিজির (সা) বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আক্রোশ প্রকাশ করেননি। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে, কুরাইশরা শহর মক্কা শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে মদিনায় পাঠানো আব্বাসের পক্ষে সম্ভব হয়নি; তা করতে গেলে কুরাইশরা হয়তো তাঁর পরিকল্পনা জেনে ফেলত ।

আব্বাসের ভৃত্য অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আনুমানিক তিন দিনের মধ্যেই মদিনায় পৌঁছে যায়। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে দ্রুত ওই পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব ছিল না। একই দূরত্ব কুরাইশরাও বেশ তাড়াতাড়িই অতিক্রম করেছিল, তবু তাদের সাত দিন লেগেছে। ভৃত্যটি কুবা পর্যন্ত গিয়ে নবিজির (সা) সাক্ষাৎ এবং আব্বাসের চিঠিটি তাঁকে হস্তান্তর করে। নবিজি (সা) তখন কাছাকাছি থাকা উবাই ইবনে কাবকে ডেকে চিঠিটি পড়তে বলেন। চিঠি পুরোটা শোনার পর তিনি উবাইকে বলেন, “এই ব্যাপারটি আর কাউকে বলো না।”
কুরাইশ বাহিনীর খবর আগে এসে পৌঁছলেও মুসলিমদের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না। নবিজি (সা) তৎক্ষণাৎ মদিনায় ফিরে এসে সাদ ইবনুল রাবিসহ কয়েকজন আনসার নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে তিনি এ বিষয়ে সাধারণ সভা ডাকার আগে কুরাইশদের খবরাদি নেওয়ার জন্য তিনজন গুপ্তচর পাঠান।
এখানে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, তিনি কি তাহলে আব্বাসকে অবিশ্বাস করছিলেন? অবশ্যই না। তিনি তাঁর চাচাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তিনি হয়তো সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। এমনও হয়ে থাকতে পারে যে, কুরাইশরাই আব্বাসের নাম করে ভুয়া তথ্য দিয়েছে। তাই নবিজির (সা) জন্য খবরের সত্যতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল ।

গুপ্তচররা গিয়ে দেখল, আসলেই কুরাইশদের ৩,০০০ জনের সেনাবাহিনী মক্কা থেকে মদিনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা এতটাই কাছে চলে এসেছে যে, তাদের মদিনায় পৌঁছতে আর এক বা দুই দিন লাগতে পারে। এখানে লক্ষণীয়, নবিজি (সা) অত্যন্ত সতর্কভাবে কাজ করছিলেন, আবেগ বা হুজুগের বশবর্তী হয়ে কিছু করেননি। পরিস্থিতি সংকটময় হলেও তিনি আতঙ্কিত হননি, ঠান্ডা মাথায় তা মোকাবেলা করেছেন।
সম্ভবত শাওয়াল মাসের ১১ তারিখে নবিজি (সা) নিশ্চিত হন যে কুরাইশরা মদিনার খুব কাছে চলে এসেছে। কিছু বর্ণনা অনুসারে ১২ তারিখে, কিছু বর্ণনা অনুসারে ১৩ তারিখে কুরাইশরা মদিনার উপকণ্ঠে পৌঁছে। সুতরাং নবিজি (সা) প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আনুমানিক ৪৮ ঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন। কুরাইশ বাহিনীর আগমন এবং তাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি মুসলিমদের নিয়ে একটি বড় আকারের সভা আহ্বান করেন ।
আরও পড়ুনঃ
