মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২,  খন্দকের যুদ্ধের সময় খাবারের ঘাটতির ব্যাপারে যে অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে বহু কাহিনি প্রচলিত আছে । জাবির ইবনে আবদিল্লাহ বর্ণনা করেছেন, নবিজি (সা) পরিখা খননের একপর্যায়ে হাত ওপরে তুললে তাঁর পরনের পোশাকটি সরে গিয়ে পেটের কিছুটা উন্মুক্ত হয়। তখন জাবির নবিজির (সা) পেটে একটি পাথর বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। তখনকার দিনে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে নিজের পেটে শক্ত করে পাথর বেঁধে রাখত, যাতে মানসিকভাবে অনুভব করে যে তার পেট ভরা আছে। পেটে পাথরের ভাৱে ক্ষুধার অনুভূতি জাগত না।

মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এই দৃশ্য দেখে জাবির নিজের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, “আমি এমন কিছু দেখেছি যা সহ্য করার শক্তি আমার নেই। আমাদের ঘরে কী আছে?” তাঁর স্ত্রী বললেন, “ঘরে কিছু রুটি আর একটি ছাগলের বাচ্চা আছে। আর কিছু নেই।” জাবির স্ত্রীকে রুটি বানাতে বলে ছাগলের বাচ্চাটিকে জবাই করলেন, যাতে তিনি প্রিয় নবিকে (সা) এক বেলার জন্য হলেও কিছু খাওয়াতে পারেন। তারপর তিনি নবিজির (সা) কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমার স্ত্রী কিছু খাবার রান্না করেছে। আপনি ও এক বা দুজন সাহাবি যদি আমার বাড়িতে আসতেন, তাহলে আমরা একসঙ্গে খেতে পারতাম।”

এ কথা শুনে নবিজি (সা) দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশে বললেন, “তোমরা সবাই শোনো। জাবির ও তার স্ত্রী আমাদের জন্য খাবার রান্না করেছে! তোমরা সবাই নিমন্ত্রিত!” তারপর জাবিরকে বললেন, “আমি না আসা পর্যন্ত তোমার রান্নার পাত্র চুলা থেকে নামাবে না।” জাবির এর জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি দ্রুত স্ত্রীর কাছে ছুটে গিয়ে বললেন, “নবিজি (সা) তো পরিখা খননের কাজে যারা ছিল তাদের সবাইকে আমাদের বাসায় নিমন্ত্রণ করেছেন! এখন আমরা কী করব? আমাদের কাছে তো অল্প কিছু খাবার আছে।”

জাবিরের স্ত্রী: সবাইকে এখানে আসার নিমন্ত্রণ তুমি করেছ, না নবিজি (সা)

করেছেন?

জাবির: নবিজি (সা) করেছেন।

জাবিরের স্ত্রী: তাহলে চিন্তা করো না। কোনো সমস্যা হবে না। নবিজি (সা) যখন তাঁদের বাড়িতে এলেন তখনও রান্নার পাত্র চুলাতেই ছিল। তিনি দোয়া করে পাত্রটির ওপর একটুখানি থুতু ছিটিয়ে দেন। তারপর ১০ জন সাহাবিকে ঘরে ঢুকতে বললেন। ঘরটিতে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি মানুষের বসার উপযোগী জায়গা ছিল না। ১০ জন সাহাবি ঘরটিতে ঢুকে খাবার খেয়ে বেরিয়ে আরও ১০ জন ভেতরে ঢুকলেন। এভাবে পালাক্রমে খাওয়া চলতে থাকল যতক্ষণ না সবার পেট ভরে খাওয়া শেষ হয়।

খন্দকের সবাই সেদিন সেই একটি পাত্রে থাকা খাবার ও রুটি খেয়েছিলেন। অনেক কাল পরে, একজন জাবিরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনার কী মনে হয়, আমরা সেদিন মোট কতজন ছিলাম?” উত্তরে জাবির বলেছিলেন, “আনুমানিক হাজার খানেক। ”

সেই সময় খাবার নিয়ে অন্তত তিন-চারটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। নবিজি (সা) অল্প পরিমাণ খাবার নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন এবং আল্লাহ ভাতে বরকত দিয়েছেন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা

যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা ছিল, মুসলিমরা এমন জায়গায় শিবির স্থাপন করবেন, যাতে করে সদ্য খনন করা পরিখা বা খন্দক তাঁদের সামনের দিকে থাকে আর সিলা পর্বতটি থাকে তাঁদের পেছনের দিকে। সেই হিসেবে মদিনা শহর তাঁদের পেছনের দিকে ছিল ।

 

মুসলিমদের কৌশলগত পরিকল্পনা | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আহজাবের নেতৃস্থানীয় দল ও নেতারা

ইবনে সাদ বর্ণনা করেছেন, খন্দকের যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় চার হাজার লোক অংশ নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে ছিল ৩০০টি ঘোড়া ও ১৫০টি উট। কুরাইশদের ইতিহাসে তখন পর্যন্ত এটিই ছিল সবচেয়ে বড় লোকবলের সমাহার। অন্য উপজাতিগুলো থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ ছিল। যেমন, বনু সুলায়েমের ৭০০, বনু ফিজারার এক হাজার, বনু আশজার ৪০০, বনু মুররাহর ৪০০, বনু আসাদের ৭০০, ইত্যাদি।

এতগুলো দল একসঙ্গে জোট বাঁধার কারণেই এই যুদ্ধকে আহজাবের (জোট) যুদ্ধও বলা হয়। কুরাইশদের দলটি সবচেয়ে বড় বলে স্বাভাবিকভাবে তাদেরই প্রাধান্য ছিল। তবে সেখানে কোনো একক নেতা ছিল না, আর সে কারণেই তাদের বিপর্যয় ঘটেছিল। আমরা এখন আহজাবের কয়েকজন নেতা সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করব।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment