উমর ইবনুল খাত্তাব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

হামজার ইসলাম গ্রহণের মাত্র তিন দিন পরে আল্লাহ মুসলিমদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মান্তরের মাধ্যমে সাহায্য করেছিলেন। এবারের ব্যক্তিটি উমর ইবনুল খাত্তাব। সম্ভবত এটি ছিল দাওয়ার ৬ষ্ঠ বছরের জিলহজ মাসের ঘটনা। এর আগে (১৫তম পর্বে) উল্লেখ করেছি, আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্য যখন লায়লা জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে উটের পিঠে চাপাচ্ছিলেন, তখন উমর সেখান নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের যাত্রার প্রস্তুতি খেয়াল করেন। তিনি লায়লাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কোথায় সফরে যাচ্ছ?” এতে লায়লা বিরক্ত হয়ে বললেন, “সব কিছুই হচ্ছে এ জন্য যে তোমরা আমাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন করছ কেবল আমরা আল্লাহর ইবাদত করতে চাই বলে! তোমাদের কারণে আমাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হচ্ছে। আমাদের এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করতে হবে যেখানে আমরা নিরাপদে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি।”

 

উমর ইবনুল খাত্তাব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

উমর ইবনুল খাত্তাব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

লায়লা উমরের কাছ থেকে তাঁর কথার কঠোর প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করলেও উমর উল্টো সহানুভূতি প্রকাশ করে বললেন, “বিষয়টি কি সেই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে? আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে থাকুন।” একথা বলে উমর (রা) সেখান থেকে চলে গেলেন। বিস্মিত লায়লা তাঁর স্বামী বাড়িতে আসার সাথে সাথে তাঁকে ঘটনাটি খুলে বললেন। তাঁর স্বামী বললেন, “তুমি কি সত্যিই মনে কর যে, তিনি আমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন এবং ইসলাম গ্রহণ করবেন? তাঁর বাবার বাড়ির গাধাগুলোও এর আগে ইসলাম গ্রহণ করবে। ” লায়লার স্বামী আমির ইবনে রাবিয়া অনুমান থেকে একথা বলেছেন। কিন্তু  তিনি তো জানতেন না, নবিজি (সা) আল্লাহর কাছে কী দোয়া করেছেন!

নবি করিমের (সা) দোয়াটি উমরের পুত্র ইবনে উমরের সুনান আল- তিরমিজিতে বর্ণিত আছে। নবিজি (সা) আল্লাহর কাছে একটি দোয়া করেছিলেন, “হে আল্লাহ। উমর ইবনুল খাত্তার এবং আবু জেহেল বিন হিশামের মধ্য থেকে যে আপনার নিকট অধিক প্রিয় তাঁর দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী ও গৌরবময় করুন। এই দুজনই ছিল সেই সময় ইসলামের কঠোরতর শত্রু। তারা দুজনেই ছিল শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং বংশের দিক থেকে প্রভাবশালী। সুতরাং নবিজি (সা) এই দুজনের মধ্যে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ব্যক্তিটিকে ইসলামের জন্য পেতে চেয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই উমর আল্লাহর কাছে আবু জেহেলের চেয়ে অধিকতর প্রিয় ছিলেন। এই দুজনের কেউ ইসলামে আসবে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উমরের হৃদয়কে ইসলামের পথে চালিত করেন।

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ক্ষমতাশালী মানুষেরাই জনগণের ওপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাবশালীদের ধর্মান্তর সমাজে নতুন ধর্মকে এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি দেয়। সুতরাং দাওয়াতের কাজকে কার্যকর করতে হলে সমাজের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ওপর মনোনিবেশ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। সে কারণেই নবিজি (সা) ভেবেছিলেন, এই দুজনের একজন ইসলাম গ্রহণ করলে তা মুসলিমদের জন্য বড় অবলম্বন হিসেবে কাজ করবে।

| প্রাসঙ্গিক দ্রষ্টব্য: আমেরিকায় ইসলামের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলির চেয়ে বেশি ইতিবাচক ভাবমূর্তি আর কেউই বয়ে আনতে পারেনি। কেননা আলি ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যাঁকে সবাই পছন্দ করত, ভালোবাসত। তিনি জনসমক্ষে ইসলাম গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে ইসলাম কী তা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। শত শত স্কলার যা করতে পারেননি, মুহাম্মদ আলি একাই তা করতে পেরেছেন এবং এটাই বাস্তব। তাই দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের সেই সব ব্যক্তির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যারা সমাজের অন্যদের ওপর প্রভাব রাখতে পারে।]

 

উমর ইবনুল খাত্তাব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন, “উমর ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আজ অবধি আমরা (মুসলিমরা) ইজ্জতের (সম্মানের) সাথে বাস করছি। একটা সময় ছিল যখন আমাদেরকে হারাম শরিফে নামাজ পড়তে দেওয়া হতো না। কিন্তু উমর যেদিন ধর্মান্তরিত হলেন, সেদিন আমরা সবাই হারামে নামাজ পড়তে পেরেছিলাম।”

নিঃসন্দেহে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে কিংবদন্তিতুল্য এক ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিকভাবে বলতে গেলে, উমরের খেলাফতকাল ছিল ইসলামের সাফল্যের সেরা সময়, যার সাথে অন্য কোনো সময়ের তুলনা হতে পারে না। ইবনে আব্বাস (রা) একবার উমরকে (রা) জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কীভাবে আল-ফারুক (যিনি সত্যকে মিথ্যা থেকে এবং ভালোকে মন্দ থেকে পৃথক করেন) উপাধি পেলেন?” জবাবে উমর (রা) বলেন, “নবিজি (সা) আমাকে এই উপাধিটি দিয়েছেন। যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি, সেদিনই আমরা সব মুসলিম দুই সারিবদ্ধ হয়ে কাবার দিকে রওনা হই। এক সারির নেতৃত্বে ছিলাম আমি, আরেক সারির নেতৃত্বে ছিলেন হামজা। সেদিনই আমরা প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে নামাজ পড়েছি। তখনই নবিজি (সা) আমাকে এই উপাধিটি দিয়েছিলেন।”

আরো পড়ূনঃ

Leave a Comment