হাসান ইবনে সাবিতের দুর্বলতা থেকে শিক্ষণীয় | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

হাসান ইবনে সাবিতের দুর্বলতা থেকে শিক্ষণীয় | খন্দকের যুদ্ধ-১, ক. গত পর্বে হাসানের সেই ভুলের (আয়েশার অপবাদের ঘটনা নিয়ে বলাবলি করা) ঘটনাটি স্মরণ করে দেখুন। দুটি ঘটনা থেকে আমরা ভালোমন্দ মিলিয়ে সাহাবিদের মানবিক বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ দেখতে পাই। আমাদের অনেকের মধ্যেই সাহাবিদের অতিমানবীয় ভাবার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু তা মোটেই ঠিক নয়। আমাদের মানতে হবে, সাহাবিদের কেউ কেউ গুনাহ করেছিলেন, তারপর অনুতপ্তও হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তেমনই আমরাও আশা করতে পারি যে, আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ আমাদেরও ক্ষমা করবেন।

হাসান ইবনে সাবিতের দুর্বলতা থেকে শিক্ষণীয় | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হাসান ইবনে সাবিতের দুর্বলতা থেকে শিক্ষণীয় | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খ. এই দুর্বলতা সত্ত্বেও হাসানের ভালো কিছু দিক ছিল। তিনি ছিলেন নবিজির (সা) অফিসিয়াল’ কবি। কুরাইশরা নবিজির (সা) নামে কুৎসামূলক কবিতা লিখলে তিনি হাসানকে বলেছিলেন, “হে হাসান, ওঠো, আমাকে (তোমার কবিতা দিয়ে) রক্ষা করো। ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) তোমার সঙ্গে থাকবেন। আমরা জানি, জিব্রাইল (আ) ইলহামের মাধ্যমে হাসানের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলেছিলেন। হাসানের নিজের একটি বিশেষ মিমবার ছিল যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন।

আবু দাউদ ও অন্য কিছু গ্রন্থে বর্ণিত আছে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তাঁর খেলাফতের সময় একবার হাসানকে মসজিদের ভেতরে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। হাসান তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি আমাকে আঘাত করলেন কেন?” উমর (রা) বলেন, “তুমি কেন নবিজির (সা) মসজিদে বসে কবিতা আবৃত্তি করছ?”

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তখন হাসান খলিফা উমরকে (রা) বলেন, “আল্লাহর কসম, এর আগে আমি যখন এই মসজিদে বসে কবিতা আবৃত্তি করতাম, তখন আপনার চেয়েও উত্তম কেউ এখানে ছিলেন।” তারপর হাসান সেখানে উপস্থিত আবু হুরায়রার দিকে চেয়ে বলেন, “হে আৰু হুরায়রা, আমি আল্লাহর শপথ নিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। আপনি কি সেদিন নবিজিকে (সা) বলতে শোনেননি, ‘হে হাসান, ওঠো, আমাকে রক্ষা করো, ফেরেশতা জিব্রাইল তোমার সঙ্গে থাকবেন?”

 

হাসান ইবনে সাবিতের দুর্বলতা থেকে শিক্ষণীয় | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আবু হুরায়রা (রা) সায় দিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, তিনি তা বলেছিলেন।” গ. এই পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট ও অনন্য ভূমিকা রয়েছে। আমাদের পাপ বা দুর্বলতাগুলো যেন কখনই আমাদের সেইসব ভূমিকা পালনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় । হাসান ইবনে সাবিত যেমন নিজের দুর্বলতার দিকটি জানতেন, তেমনি অন্যরাও তা জানত। তাই তাঁকে নারী ও শিশুদের সঙ্গে দুর্গের  ভেতরে নিরাপদে থাকার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু যখন নবিজি (সা) তাঁকে সাহায্যের জন্য ডেকেছেন, তখন তিনি কোনো কিছু না ভেবেই তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে তার ভূমিকাটি ছিল এমনই অনন্য, যা অন্য কোনো সাহাবির পক্ষে পালন করা সম্ভব ছিল না। ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও এভাবেই সাহাবিরা মানবিক বৈশিষ্ট্যে এক একজন নক্ষত্র।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment