নবিজিকে (সা) হত্যার জন্য গাওরাস ইবনুল হারিসের চেষ্টা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে, দ্বিতীয়টি হলো ধাত আল-রিকা থেকে মদিনায় ফেরার পথে সংঘটিত একটি অলৌকিক ঘটনা । এমনিতেই গ্রীষ্মকালের মরুভূমি, তার ওপরে সেদিন ছিল প্রচণ্ড গরম। নবি’জি (সা) কোনো অভিযানে যাওয়া বা অভিযান থেকে ফেরার সময় যাত্রা শুরু করতেন ফজরের পর এবং সূর্য খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই বিশ্রামের জন্য থামতেন। সেদিন ধাত আল-রিকা থেকে ফেরার পথে মধ্যাহের কিছুটা আগে (বেলা এগারো বা সাড়ে এগারোটায়) সবাইকে নিয়ে বিশ্রামের জন্য থামেন। ক্লান্ত সাহাবিরা অচিরেই ঘুমিয়ে পড়েন। নবি’জিও (সা) একটি গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়েন।
নবিজিকে (সা) হত্যার জন্য গাওরাস ইবনুল হারিসের চেষ্টা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

গাওরাস ইবনুল হারিস নামে গাতাফানের এক বেদুইন মুসলিম বাহিনীকে অনুসরণ করছিল। সবাইকে ঘুমাতে দেখে তার মনে হলো, নবি’জিকে (সা) হত্যা করার এ এক সুবর্ণ সুযোগ! সে খুব কাছাকাছি চলে এসে নবিজির (সা) তলোয়ারটি হাতে নিল । নবি’জি (সা) জেগে উঠলে বেদুইনটি তলোয়ার নাড়িয়ে তাঁকে বলল, “তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছ?” নবি’জি (সা): না। আমি তোমাকে কেন ভয় পাব?
বেদুইন: তোমার তলোয়ার এখন আমার হাতে, তবু তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছ না?
নবি’জি (সা): না। আমি তোমাকে মোটেই ভয় পাচ্ছি না।
লোকটা এবার ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। আসলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাই তার অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ভয়ে একসময় লোকটার হাত থেকে তলোয়ার পড়ে যায়। সে ছিল নিতান্তই এক সাধারণ বেদুইন। তার যুদ্ধ করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।
আরেক বর্ণনা অনুসারে, বেদুইনটি নবি’জির (সা) তলোয়ার হাতে নিয়ে তাঁকে বলে, “এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে রক্ষা করবে কে?” নবি’জি: আল্লাহ।
তিনি আল্লাহ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে বেদুইনের হাত থেকে তলোয়ারটি পড়ে যায় । নবি’জি (সা) (সেটি তুলে নিয়ে বেদুইনটির দিকে ফিরে)। এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে রক্ষা করবে কে?

বেদুইন: যে দুজন তলোয়ার হাতে নিয়েছে, তুমি তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি। (অর্থাৎ, আমি তোমার ওপর দয়া প্রদর্শন করতে চাইনি, কিন্তু তুমি আমার চেয়ে উত্তম আচরণ করো এবং আমার ওপর দয়া করো।) নবি’জি (সা): তুমি কি সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নাই এবং আমিই আল্লাহর রসুল? বেদুইন: আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আর কখনও তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না; বা কেউ তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে আমি তাদের সাহায্য করব না।” সে ইসলাম গ্রহণ করেনি, তবে সে সত্যবাদী ছিল ।
জাবির এই কাহিনি বর্ণনা করেছেন, তা সহিহ বুখারিতে আছে: “আমরা ছায়া খুঁজতে খুঁজতে পুরো উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম এবং আমরা ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। এক সময় নবিজির (সা) ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে। তিনি বলেন, *এখানে এসো! এখানে এসো!” লক্ষ করুন, সাহাবিরা এমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন যে নবি’জি (সা) তাঁদের না ডাকা পর্যন্ত তাঁরা কেউই সেই ঘটনার কিছুই টের পাননি।

সাহাবিরা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, নবিজি (সা) তাঁর তলোয়ারটি গাওরাস নামের ওই বেদুইনের ঘাড়ের ওপর চেপে ধরে আছেন। তারপর তিনি তাঁদের পুরো ঘটনাটি জানালেন। জাবির আরও বর্ণনা করেছেন, “নবি’জি (সা) কিছুই না করে বেদুইনটিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তবে সে আর কখনও আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে তার লোকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলেছিল, ‘আমি মানবজাতির মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তির কাছ থেকে ফিরে এসেছি।”
আরও পড়ুনঃ
