আবু আইয়ুব আল-আনসারি ও তার স্ত্রী | আয়েশার (রা) ওপর মিথ্যা অপবাদ-২, একদিন আবু আইয়ুব আল-আনসারির স্ত্রী বাড়ি ফিরে স্বামীকে বলল, “ব্যাপার কি শুনেছ?” এটুকু শুনেই আৰু আইয়ুব রেগে গিয়ে বললেন, “আমরা কীভাবে এ বিষয় নিয়ে কথা বলছি? এ এক জঘন্য অপবাদ!” আবু আইয়ুব আল-আনসারি নিজের ঘরের ভেতরে স্ত্রীকে যেসব কথা বলেছিলেন, আল্লাহ তা সুরা নুরের একটি আয়াতে উদ্ধৃত করেছেন: “আর যখন তোমরা এসব শুনলে তখন কেন বললে না, ‘এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। (হে আল্লাহ) তুমি মহান পবিত্র।’ এ তো এক গুরুতর অপবাদ।” [সুরা নূর, ২৪:১৬]
আবু আইয়ুব আল-আনসারি ও তার স্ত্রী | আয়েশার (রা) ওপর মিথ্যা অপবাদ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

এই ঘটনার শিক্ষা
ক. মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, পরনিন্দা (‘গিবত’) করা এবং গুজব ছড়ানো (‘নামিমাহ’) পৃথক পৃথক গুনাহের (পাপের) কাজ। বেশির ভাগই কবিরা গুনাহ। এগুলো কোনো নারীর সম্মানহানির কারণ ঘটালে তা শরিয়ত অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও গিবত এবং নামিমাহ করার অনুমতি নেই।
খ. আল্লাহ মুমিনদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। এমনকি আয়েশার (রা) মতো অল্পবয়সী নারীকেও এমন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যাতে আল্লাহর কাছে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ যাঁকে যত বেশি ভালোবাসেন, তাঁর তত বেশি পরীক্ষা নেন।
গ. কোরানে আছে, “তাই কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি রয়েছে। কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি রয়েছে।” [সুরা ইনশিরাহ, ৯৪:৫-৬) জীবনে স্বস্তি ও কষ্ট কোনোটাই স্থায়ী নয়; আমাদের সবসময়ই চড়াই-উত্রাই ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

ঘ. মুনাফেকরা নবিজির (সা) স্ত্রী সম্পর্কে যা বলেছে ও করেছে তা থেকে তাদের অত্যন্ত হীন মানসিকতার প্রমাণ মেলে। তবে এই ঘটনার পেছনেও আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু প্রজ্ঞা নিহিত ছিল যা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারি না। আল্লাহ বলেছেন, “এই অপবাদকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে কোরো না, বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” [ 24:11] এরকম একটি বেদনাদায়ক ঘটনার মধ্যেও যদি সমাজের জন্য কল্যাণকর কিছু থেকে থাকে, তবে আমরা যত বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীনই হই না কেন তার পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো ভালো কিছু থাকবে, তা আমরা উপলব্ধি করি বা না করি ।
ঙ. ধৈর্য ধরলে সুফল পাওয়া যায়। ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে তার ফল আপনি পাবেনই। আপনি যদি সত্যের পথে থাকেন এবং আন্তরিক হন তবে অন্য কেউ না করলেও আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন।

চ. এই ঘটনা থেকে আমরা ইসলামে উম্মুল মুমিনিন আয়েশার (রা) উচ্চতর সম্মান ও মর্যাদার সন্দেহাতীত প্রমাণ পাই। আল্লাহ তায়ালা কোরানের আয়াত নাজিল করে তাঁকে অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি পবিত্র, নিষ্কলুষ এবং সত্যবাদী (‘সিদ্দিকা’)। তাঁকে নিয়ে কোরানে ২৫টিরও বেশি আয়াত নাজিল হয়েছে। কোনো কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায় আয়েশার (রা) চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। আল্লাহ নিজে যাঁকে কোরানের আয়াতের মাধ্যমে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তাঁর সতীত্ব ও নৈতিকতা নিয়ে যারা অভিযোগ করার সাহস করে, আমরা সেই ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে মুসলিম বলে বিবেচনা করি না। তবে সম্প্রদায়ের সবাই এই অভিযোগ করে না এবং তাদের মধ্যেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য বর্তমান সময়ে ওই সম্প্রদায়ের মূলধারার ব্যক্তিরা আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে এই অপবাদকে মিথ্যা বলে মনে করে।
আরও পড়ুনঃ
