ইয়াসরিবে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক | মদিনাপর্বের ভূমিকা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইয়াসরিবে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক | মদিনাপর্বের ভূমিকা, আউস ও খাজরাজরা ইয়াসরিবে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার ফলে তারা ও ইহুদিরা পরস্পরের দ্বারা উপকৃত হয়েছিল। ইহুদিরা কৃষিকাজ, পোশাক বুনন ও ব্যবসায় পারদর্শী ছিল। অন্যদিকে আরবদের দক্ষতা ছিল ভাষা ও যুদ্ধবিদ্যায়। কালক্রমে ইহুদিরা আরবদের ভাষা ও সংস্কৃতি আত্মস্থ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের আরবীয় করে তুলেছিল। একসময় তারা সাবলীলভাবে আরবি বলতে শুরু করে, যদিও হিব্রু ভাষার চর্চাও অব্যাহত রেখেছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বহু প্রজন্য ধরে নিজের ভাষা ধরে রাখতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক।

 

ইয়াসরিবে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক | মদিনাপর্বের ভূমিকা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইয়াসরিবে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক | মদিনাপর্বের ভূমিকা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ধারণা করা যায়, আউস ও খাজরাজ উপজাতি একই সময়ে ইয়াসরিবে বসতি স্থাপন করেনি; সম্ভবত কয়েক বছরের ব্যবধান ছিল। সম্ভবত আউসরা আগে এসেছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আউসরা সেখানে থাকার জন্য বনু কুরায়জা ও বনু নাদিরের অনুমতি চায়। পরবর্তীকালে ওই দুটি ইহুদি উপজাতির সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। অন্যদিকে খাজরাজ উপজাতি পরে এসে বনু কায়নুকার অনুমতি নিয়ে বসতি গড়ে এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

এখানে দেখা যাচ্ছে, এই দুটি আরব উপজাতি আলাদাভাবে তিনটি ইহুদি সঙ্গে জোট বাধে। আউসরা ছিল আর্থ-সামাজিক দিক থেকে খাজরাজের তুলনায় সমৃদ্ধ। ইয়াসরিবের ভালো জমিগুলো ছিল তাদের দখলে। অন্যদিকে কৃষি, বুনন, ব্যবসা ইত্যাদি চালানোর জন্য ইহুদিদের কায়িক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। এ জন্য তারা আউসদের সঙ্গে এক ধরনের ব্যবসায়িক সমঝোতায় পৌঁছেছিল: ‘তুমি এই জমির দায়িত্ব নাও, ফসলের একটি অংশ আমাকে দেবে, বাকি অংশ তোমার।’

 

bn.islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পরবর্তী ১৫০-২০০ বছর ধরে এই আরব ও ইহুদিদের সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়েছে। আউস ও খাজরাজ একদিকে যেমন ইহুদিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল, অন্যদিকে তাদের মধ্যে ছিল চরম বৈরিতা। এই দুই আরব উপজাতির মধ্যে গৃহযুদ্ধ ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল বুঝতের যুদ্ধ, যা সংঘটিত হয়েছিল নবি করিমের (সা) মদিনায় হিজরতের পাঁচ বছর আগে।

আরও জানা যায়, গৃহযুদ্ধের সময় ইহুদি উপজাতিরা নিজ নিজ মিত্র আরব উপজাতিদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছিল: একদিকে বনু নাদির আউসকে, অন্যদিকে বনু কায়নুকা খাজরাজকে অর্থ দিয়েছিল। সুতরাং একথা বলা যায় যে, ইহুদিরা ইয়াসরিবে গৃহযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে তারা শারীরিকভাবে যুদ্ধ করেছিল কি না সে বিষয়ে আমরা জানি না ।

 

ইয়াসরিবে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সম্পর্ক | মদিনাপর্বের ভূমিকা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সেই সময় কত লোক ইয়াসরিবে বাস করছিল?

ধারণা করা যায়, তিনটি ইহুদি উপজাতির সব পুরুষের সংখ্যা যোগ করলে তা হবে আনুমানিক দুই হাজার। তাদের সঙ্গে নারী ও শিশুদের যোগ করলে ইহুদিদের মোট জনসংখ্যা হবে আনুমানিক ছয় হাজার। অন্যদিকে, যেমনটি আমরা জানি, মক্কা বিজয়ের সময় চার-পাঁচ হাজার আনসার অংশ নিয়েছিলেন। একইভাবে তাঁদের নারী ও শিশুদের যোগ করলে সে সময় ইয়াসরিবে আরব লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। আরবদের সংখ্যা ছিল, কিন্তু শক্তির দিকে থেকে এগিয়ে ছিল ইহুদিরা। কারণ অর্থ, জমি ও দুর্গ ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ ইয়াসরিবের মোট জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার; সেই সময়ের বিবেচনায় একটা বড় শহর ছিল ইয়াসরিব।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment