আনাস ইবনে আল-নাদরের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৪, অন্যদিকে নবিজির (সা) মৃত্যুর গুজবটি সাহাবিদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দেয়। এখন কী করতে হবে তা ঠাহর করতে পারছিলেন না; কয়েকজন মনোবল হারিয়ে তলোয়ার ফেলে মাটিতে বসে পড়েন।
আনাস ইবনে আল-নাদরের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, আনাস ইবনে মালিকের (রা) চাচা আনাস ইবনে আল-নাদর (রা) এরকম হতাশাগ্রস্ত কজন সাহাবির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা যুদ্ধ করছ না কেন? শত্রুরা তো এখনও এখানে আছে!”
সাহাবিরা: আপনি কি শোনেননি যে নবিজিকে (সা) হত্যা করা হয়েছে?
আনাস: নবিজিকে (সা) হত্যা করা হলেও তাঁর প্রতিপালককে তো আর হত্যা করা হয়নি! আর নবিজি (সা) যদি মারাই গিয়ে থাকেন, তবে তোমরা তোমাদের জীবন রেখে আর কী করবে? চলো, আমরাও তাঁর মতো (ইসলামের জন্য) জীবন দিয়ে দিই।
এ কথা বলে আনাস তাঁর তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়লেন। পথিমধ্যে সাদ ইবনে মুআদের (রা) সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে বললেন, “হে সাদ, আমি এই পাহাড়ের ওপার থেকে জান্নাতের সুবাস পাচ্ছি!” অর্থাৎ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। তারপর তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ, আমার সহযোগী মুসলিমরা যা করেছে সে জন্য আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আর কুরাইশরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছি।”
লড়াই করতে গিয়ে আনাস শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর দেহ এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল যে তাঁকে চেনা যাচ্ছিল না। জানা যায়, তাঁর সারা দেহে ৮০টিরও বেশি ক্ষত ছিল। অবশেষে তাঁর বোন এসে তাঁর আঙুল দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। আনাস প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সুরা আহজাবে একটি আয়াত নাজিল করেন: “মুমিনদের মধ্যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে তাদের অঙ্গীকার পুরো করেছে, কেউ শহিদ হয়েছে ও কেউ প্রতীক্ষায় আছে। তারা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।” [33:23]

কাব ইবনে মালিক (রা) নবিজিকে (সা) খুঁজে পেলেন

নবি করিমের (সা) মৃত্যুর গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তবু কিছু সাহাবি তাঁকে খুঁজে চলেছেন। তাঁকে প্রথম দেখতে পেলেন কাব ইবনে মালিক (রা)। কাব নবিজির (সা) চোখ এবং দেহের উজ্জ্বলতা দেখে তাঁকে চিনতে পারলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, “হে মুসলিমগণ, আনন্দ করো! নবিজি (সা) বেঁচে আছেন!”
কিন্তু নবিজি (সা) তাঁকে চুপ থাকতে বললেন, কারণ এই খবর ছড়ানো এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কার নিজের বর্মটি এবার নবিজির (সা) গায়ে পরিয়ে দিলেন যাতে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে।
আরও পড়ুনঃ
