মুরাইসির অভিযানের পরের তিনটি ঘটনা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান, যুদ্ধ হিসেবে বনু আল-মুস্তালিকের কাহিনি খুব তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও এর পরের তিনটি ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য:
মুরাইসির অভিযানের পরের তিনটি ঘটনা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

১) আয়েশার (রা) ওপর অপবাদ এই দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি আমরা পরবর্তী একটি পর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
২. জুওয়ারিয়া বিনতে আল-হারিসের সঙ্গে নবিজির (সা) বিয়ে দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে আরও একজনের সংযোজন। ইনি হলেন বনু আল-মুস্তালিকের সর্দারের কন্যা জুওয়ারিয়া বিনতে হারিস।
ইবনে ইসহাকে বর্ণিত আছে, আয়েশা (রা) বলেছেন: “জুওয়ারিয়াকে বন্দি করার পর তাকে সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে শাম্মাস নামের একজন আনসারিকে দেওয়া হয়েছিল। জুওয়ারিয়া তখন নিজেকে স্বাধীন করার ব্যাপারে সাবিতের সাথে এক সমঝোতায় আসেন।” উল্লেখ্য, একজন দাস অর্থ শোধ করার বিনিময়ে নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে পারত (অর্থাৎ নিজেকে একজন দাস থেকে মুক্ত মানুষে পরিণত করতে পারত), যা ইসলামি সমাজে প্রচলিত ছিল। পবিত্র কোরানে আছে:
“…আর তোমাদের অধিকারে থাকা দাসদাসীদের মধ্যে যারা (মুক্তির জন্য অগ্রীম) চুক্তি লিখিয়ে নিতে চায় (অর্থাৎ নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে চায়), তোমরা তাদের তা লিখে দাও, যদি তাদের মধ্যে ভালো কিছু দেখতে পাও…।” [সুরা নুর, 24:33 ]।

জুওয়ারিয়া ছিলেন গোত্রের নেতার কন্যা। তিনি দাস হয়ে থাকতে চাননি। তিনি সোজা এসে নবিজির (সা) দরজায় (অর্থাৎ আয়েশার বাড়িতে) কড়া নেড়ে নিজের মুক্তির জন্য আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। এখানে উল্লেখ্য, তাঁর পিতা ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ লোকরা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। আয়েশা (রা) বলেন, “জুওয়ারিয়া দেখতে খুব মিষ্টি এবং সুন্দরী ছিলেন। এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যে তাঁর সৌন্দর্যে মোহিত হবে না। দেখামাত্রই আমি তাঁকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম, কারণ আমি জানতাম, আমি যা দেখেছি নবিজির (সা) তাঁর মধ্যে তা দেখতে পাবেন।”
নিজের পরিচয় দিয়ে জুওয়ারিয়া নবিজিকে (সা) বললেন, “আমি আমার গোত্রের সর্দারের কন্যা। আমার অবস্থা তো আপনি জানেনই। আমি নিজেকে সাবিতের কাছ থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে সাহায্য করুন।” নবিজি (সা): আমি যদি তোমাকে আরও ভালো কিছু দিই? জুওয়ারিয়া। সেটা কী?
নবিজি (সা): আমি তোমাকে মুক্তি দেব এবং (তারপর) তোমাকে বিয়ে করতে চাই । জুওয়ারিয়া এই প্রস্তাবে সম্মত হলেন। নবিজি (সা) তাঁকে মুক্ত করাকেই ‘মোহর’ হিসেবে প্রদান করলেন।

মুহূর্তেই আনসারদের মধ্যে এই সংবাদ ছড়িয়ে গেল যে, নবিজি (সা) জুওয়ারিয়াকে বিয়ে করেছেন। অর্থাৎ আল-মুস্তালিক গোত্র এখন নবিজির (সা) শ্বশুরবাড়ি। এ অবস্থায় তাঁরা বললেন, “আমরা কীভাবে নবিজির (সা) শ্বশুরবাড়ির লোকদেরকে দাস হিসেবে রাখতে পারি।” তাই তাঁরা একে একে সবাইকে মুক্ত করে দিলেন।
আরও পড়ুনঃ
